শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

শনাক্ত দেশি অপরাধীরা নতুন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ

মানিক মুনতাসির

ভবিষ্যতে যেন আর্থিক জালিয়াতি বা রিজার্ভ চুরির মতো কোনো ঘটনা না ঘটে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে যাদের চরম গাফিলতি ছিল তাদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরনের ফাঁকফোকর বন্ধ, প্রতিষ্ঠানটির তথ্যপ্রযুক্তিগত দুর্বলতা চিহ্নিত এবং এ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে নতুন তিনজন আইটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরা সবাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পৃথকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আইটি নিরাপত্তা বাড়াতে শক্তিশালী অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে বলেছে তদন্ত কমিটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও আনতে বলা হয়েছে সুপারিশে। বিশেষ করে ডিলিং রুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিকল্প সার্ভার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সার্ভারে যেন কেউ কোনোভাবে আড়ি পাততে না পারে সেজন্য দায়িত্বরতদের সর্বদা সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে সুইফট সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে। যাতে কোনো ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করা হলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আগাম সতর্কবার্তা পৌঁছে যায় সে ব্যবস্থাও নিতে বলেছে তদন্ত কমিটি।

বুধবার অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যারা ৪ ফেব্রুয়ারি ডিলিং রুমের দায়িত্বে ছিলেন তারা পেমেন্ট-সংক্রান্ত জটিলতা জানার পরও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সঠিক সময়ে অবহিত না করায় টাকাটা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। এজন্য যারা দায়িত্বে গাফিলতি করেছেন এ রকম কয়েকজন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের নাম-পদবিসহ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি। সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে রিজার্ভ চুরির পুরো ঘটনাটি ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার কী দায়িত্ব ছিল, তারা তা সঠিকভাবে পালন করেছিলেন কিনা সেসব বিষয় ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভবিষ্যতের করণীয় সম্পর্কেও কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফটের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র করা, আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সুইফটের শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা, এ কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে সংস্কার আনা ইত্যাদি। এদিকে চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনতে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রথম বৈঠক হয়েছে গতকাল। বৈঠকে ফরাসউদ্দিনের দেওয়া অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আর চুরি হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এএমএলসি যে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে, সে বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে টাস্কফোর্স। ফিলিপাইন বা ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এজন্য আইনি দিকগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টাস্কফোর্সের প্রধান ইউনুসুর রহমান। বৈঠকে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) রিজার্ভ চুরির বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে তুলে ধরা হয়, হ্যাকাররা কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে প্রবেশ করে। কোন প্রক্রিয়ায় তারা প্রবেশ করে সুইট সার্ভারে। ক্ষতিকারক ভাইরাস কীভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স এ বিষয়ে একটি লিখিত সুপারিশামলা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর