রাজশাহী মহানগরীর নিজ ব্যবসায়িক চেম্বারে পিস্তলের গুলিতে নিহত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রশাসক ব্যবসায়ী জিয়াউল হক টুকু (৫২)। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার পিস্তল থেকেই সঙ্গে থাকা ব্যবসায়িক পার্টনার তাকে গুলি করে হত্যা করেন। এদিকে তার এ মৃত্যুকে ঘিরে শুরুতে রহস্যের সৃষ্টি হলেও তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চেম্বারে বসে তার পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বুকে গুলি করে তারই ব্যবসায়িক পার্টনার ঢাকার ব্যবসায়ী নয়ন নামে এক যুবক। পুলিশ এখন তাকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে। প্রথমে খুনের ঘটনা নিয়ে নাটক সাজানো হলেও পরে ওই যুবকই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ফোনে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি ঢাকার পথে আছেন খবর পেয়ে পুলিশ তাকে ধরতে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ঘটনার পর নিজের পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়ে গুলিতে টুকু নিহত হয়েছে বলে ‘নাটক’ সাজানো হলেও এখন হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরিষ্কার করেছে নগর পুলিশ। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তাকে ফোন করে নয়ন জানিয়েছেন, তার হাত থেকেই পিস্তলের গুলি বেরিয়ে টুকুর বুকে বিদ্ধ হয়। এরপর তার মৃত্যু হয়। জানা যায়, গতকাল বিকালে রাজশাহী নগর ভবনের সামনে নিজ চেম্বারে ঢাকার পার্টনার নয়ন ও স্থানীয় আরও চার বন্ধুকে নিয়ে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল ইসলাম টুকু। এক সময় অপর তিন বন্ধু জসিম উদ্দিন, রবিউল ইসলাম ও তরিকুল চেম্বারের বাইরে এলে গুলির শব্দ পান। এ সময় টুকুকে বাইরে নিয়ে এসে নয়ন জানান, নিজের পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন টুকু। ঘটনার পর তিন বন্ধু রক্তাক্ত টুকুকে হাসপাতালে ভর্তি করলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তবে ঘটনার পর নয়ন পালিয়ে যান। এরপর থেকেই শহরে প্রচার শুরু হয় নিজের পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়েই অসাবধানতাবশত টুকু নিহত হয়েছেন। প্রথমে পুলিশও এ তথ্য জানায়। পরে নয়ন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে ফোন করে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ তাকে ধরতে অভিযান শুরু করে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সন্ধান পায়নি পুলিশ। তাকে ধরতে পুলিশ বিভিন্ন থানায় বেতার বার্তাও পাঠিয়েছে। টুকুর ব্যবসায়িক পার্টনার জসিম উদ্দিন, রবিউল ইসলাম ও তরিকুল হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, তারা চেম্বারের বাইরে ছিলেন। ভিতরে তার সঙ্গে নয়ন নামে ঢাকার এক ব্যবসায়ী ছিলেন। হঠাৎ রক্তাক্ত টুকুকে নিয়ে এসে তাদের বলে ‘পিস্তল পরিষ্কার করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’ এরপর তারা টুকুকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে সেখান থেকেই নয়ন পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনার পর ওই চেম্বার থেকে টুকুর লাইসেন্স করা পিস্তল, ব্যবহৃত গুলির খোসা, রক্তমাখা তোয়ালে উদ্ধার করেছে। জানা যায়, গুলি তার ডান বগলের নিচে বিদ্ধ হয়ে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ব্যবসায়িক পার্টনার নয়ন প্রথমে বাইরে নিয়ে এসে অপর বন্ধুদের সঙ্গে নাটক সাজিয়ে নিজে পালিয়ে যান। জিয়াউল হক টুকুর বাড়ি নগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকায়। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, টুকু রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। প্রথমে নিজের পিস্তলের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছিলেন। পরে তাকে ফোন করে নয়ন কান্নাকাটি করে জানান, ভুলবশত পিস্তল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে তার হাত থেকেই গুলি বেরিয়ে টুকু গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন। আত্মসমর্পণ করতে চান বলেও জানান। রাজশাহী মহানগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) পশ্চিম একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টুকুর লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা ভিড় জমিয়েছেন। তার চেম্বারও ঘিরে রেখেছে পুলিশ। টুকুর ভাই আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, টুকু গুলিতে আহত হয়েছেন বলে তারা খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ দেখতে পান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে টুকু দুই ছেলে সন্তানের জনক ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম লতা বেগম। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রওনক এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আর ছোট ছেলে রনু রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।