সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কেন টার্গেট রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইউনূস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিক্ষক কিলিং মিশনের শুরু। তদন্ত চলে ঢিমেতালে। দীর্ঘদিন পর জেএমবি এ হত্যার দায় স্বীকার করে। এরপর মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরপর ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এস তাহের আহমদ খুন হন। ওই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা মেলে জামায়াত-শিবিরের। কিন্তু চূড়ান্ত রায়ে জামায়াত-শিবির নেতারা খালাস পেয়ে যান। পুলিশের দুর্বল তদন্ত, মৌলবাদী চক্রের উত্থান, আর আত্মগোপনে থাকার সুযোগ পাওয়ায় মৌলবাদীরা এ অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে বলে মনে করেন রাজশাহীর নানা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করা মানুষ। তাদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে এ অঞ্চলে জঙ্গিরা তাদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন, তারাই নির্মমতার শিকার হয়েছেন। প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে না পারায় বার বার এমন নির্মমতার শিকার হচ্ছেন রাবি শিক্ষকরা। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে চারজন শিক্ষক খুন হয়েছেন, তাদের মধ্যে ড. এস তাহের আহমদ হত্যাকাণ্ডে জামায়াত-শিবির জড়িত ছিল। অন্য তিনটি হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিগোষ্ঠীরা জড়িত। পুলিশের দুর্বল তদন্তের কারণে প্রকৃত হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। ফলে তারা মাথাচাড়া দিয়েছে। যারা মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করেন, কেবল তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশ দায় এড়াতে পারে না। রাকসুর সাবেক এই নেতা বলেন, মৌলবাদী গোষ্ঠী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে উত্তরাঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়েছে। মুক্তমনা এসব মানুষেরা তাতে বাধা দিয়েছেন। ফলে প্রগতিশীল আন্দোলন দমাতে মৌলবাদীরা এমন হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতার ছায়াতলে থেকে তারা ক্ষমতা উপভোগ করেছে, আবার জঙ্গিবাদে ভূমিকা রেখেছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়, পুরো রাজশাহীর প্রগতিশীল মানুষেরা হুমকির মুখে পড়েছেন। বাগমারা-দুর্গাপুরে জঙ্গিরা আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে জঙ্গিবাদ দমানো গেলেও নির্মূল করা যায়নি। এভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তারা নিজেদের আবার সংগঠিত করতে তত্পরতা চালাচ্ছে। তারা সরকারকেও বেকায়দা ফেলে দেবে। এখনই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শহীদুল্লাহ্ বলেন, বার বার শিক্ষক সমাজের ওপর আক্রমণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একের পর এক নিরীহ শিক্ষকদের ওপর নেমে আসছে হত্যার খড়গ। যারা জ্ঞান আহরণ ও বিতরণে ব্যস্ত তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। মেধাশূন্য করার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ জোন হিসেবে ভেবে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাবি উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের নির্মমভাবে হত্যা করায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় যারা দুষ্কর্ম করছে তারা সাহসী হচ্ছে, সমাজে ভয়ের রাজনীতি তৈরি করছে। আমরা আতঙ্কিত, যে কোনো মুহূর্তে আমার মাথা কেটে নামিয়ে ফেলতে পারে। সমাজকে জ্ঞানশূন্য করার প্রক্রিয়া হিসেবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। ১৯৭১ সালে এভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জামাত খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে মৌলবাদীরা তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে। শিক্ষকদের হত্যা করে তারা মুক্তচিন্তার মানুষদের আতঙ্কিত করতে চায়। যাতে তারা নির্বিঘ্নে জঙ্গি তত্পরতা চালাতে পারে। পুলিশ যদি হত্যাকাণ্ডগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করত তাহলে এমন সাহস তারা পেত না। রাজশাহী মহিলা পরিষদের সভাপতি কল্পনা রায় মনে করেন, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের সাজা নিশ্চিত করা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দক্ষতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। মৌলবাদীদের এ শক্ত অবস্থান দূর করা না গেলে মুক্তবুদ্ধির মানুষেরা নিরাপদে থাকতে পারবেন না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর