প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিউইয়র্কে অপহরণ এবং হত্যা পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত মাহমুদুর রহমান ছাড়াও আরও তিনজনের নাম বলেছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। শিগগিরই শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া জয়কে অপহরণ ও হত্যা চক্রান্তে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে ১০ হাজার ডলার শফিক রেহমানের নামে পরিশোধ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ডিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে, গত শনিবার এক ব্রিফিংয়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের দাবির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, এটা ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’। ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শফিক রেহমান আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নাম ছাড়া ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আরও তিনজনের নাম বলেছেন। ওই নামগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। অধিকতর তদন্তে এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনজনের বিষয়ে মনিরুল বলেন, তারা তিনজনই বাংলাদেশি। তাদের কেউ প্রবাসে কেউ বাংলাদেশে থাকেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। মনিরুল বলেন, মাহমুদুর রহমানকে আদালতে নিয়ে সোমবার রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হবে। সেই সঙ্গে এই মামলায় শফিক রেহমানের মুখোমুখি করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শফিক রেহমান রিমান্ডে দাবি করেছেন, ‘তাকে এই চক্রান্তে জড়াতে মাহমুদুর রহমানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।’ ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পেরেছে, তাকে (শফিক রেহমান) আইনের মধ্য থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে তার ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ বা নিপীড়ন করা হয়নি। উনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে তথ্য দিচ্ছেন, সেই তথ্যের ভিতরে তিনি সবকিছুই উল্লেখ করছেন। এর পাশপাশি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও এফবিআইয়ের তদন্তের কিছু তথ্য অর্থাত্ ডকুমেন্ট আমরা সংগ্রহ করেছি। সেগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের কী কারণে সাজা হয়েছে। কাজেই বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে সেটি তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। শফিক রেহমানের বাসা থেকে এফবিআইয়ের গোপন নথি উদ্ধারের দাবি করলেও পুলিশ তা আদালতে জমা দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আলামত আমরা জব্দ করেছি। যথাসময়ে সেগুলো আদালতে জমা দেওয়া হবে। প্রথম দফা রিমান্ড শেষে তাকে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনার কারণ জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, তার কাছ থেকে যেসব ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে সেগুলো সম্পর্কে আরও জানতে এবং অসম্পূর্ণ জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে ফের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এ ছাড়া যে ডকুমেন্ট পাওয়া গেল তা কীভাবে, কার মাধ্যমে এলো এবং কোথায় কোথায় গেছে ও তাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ গত বছরের আগস্টে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। ১৬ এপ্রিল ডিবি পুলিশ শফিক রেহমানকে আটক করে। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখায় পল্টন থানার পুলিশ। ওই মামলায় তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার তার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হলে পর দিন শুক্রবার শফিক রেহমানকে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। এই মামলায় দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।