সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফরিদপুরে প্রার্থীর ভাই নিহত, বিজয় মিছিলেও সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফরিদপুরে প্রার্থীর ভাই নিহত, বিজয় মিছিলেও সংঘর্ষ

আশুগঞ্জের দুর্গাপুরে গতকাল ইউপি নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের তুলনায় তৃতীয় ধাপে সংঘাত কম হলেও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা থামছে না। এ ছাড়া চতুর্থ ধাপের ভোটের প্রচার-প্রচার নিয়েও চলছে সংঘর্ষ-হামলা পাল্টা হামলা। ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউপিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভাই নিহত হয়েছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে পরাজিত এক ইউপি মেম্বারের ছোট ভাইকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা পরাজিত প্রার্থীর ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে। এদিকে নির্বাচন-পরবর্তী সংঘর্ষে আশুগঞ্জ ও সরাইলে ইউপিতে ৩টি সংঘর্ষে মহিলাসহ কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গে বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। শরীয়তপুর সদরের তুলাশার, বিনদপুর ও শৌলপাড়া ইউপিতেও শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

ফরিদপুর : ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় বাগাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিয়ার রহমানের ভাই নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে চারজন। এ ঘটনার পর পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান রহিম ফকিরসহ ৮ জনকে আটক করেছে। শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই বর্তমান চেয়ারম্যান রহিম ফকিরের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিয়ার রহমান খানের সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর থেকে উভয় গ্রুপই শক্ত অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামে। শনিবার সন্ধ্যায় রায়জাদপুর গ্রামে বিএনপির প্রার্থী রহিম ফকিরের প্রচারণা চালানোর সময় বাধা দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাগাট বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মতিয়ারের বড় ভাই আতিয়ার রহমানসহ কয়েকজন বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ২০/৩০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা এ সময় কয়েকজনকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। আহতদের মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টার দিকে আতিয়ার রহমান (৫৫) মারা যান। আতিয়ারের নিহতের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ কয়েকশ মানুষ বাগাট বাজারের কাছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। উল্লেখ্য, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ৭ মে অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর : শ্রীপুরে পরাজিত এক ইউপি মেম্বারের ছোট ভাইকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। তার নাম আবুল খসরু (৫২)। তিনি মাওনা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী শামসুল হকের চাচাতো ভাই ও বারতোপা বৈশাখী নাট্যগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ বারতোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। তবে পুলিশ বলছে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। নিহতের বড় ভাই আজহারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার পর টর্চলাইট প্রতীকের প্রার্থী সুরুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে মিছিল থেকে আবুল খসরু, বাবুল সিকদার ও রবিউল্লাহ রবির ওপর তারা হামলা চালায়। তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে ভোটকেন্দ্রের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হামলাকারীরা তাদের কিল-ঘুষিতে আহত করে। পরে গুরুতর আহত আবুল খসরুকে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে নির্বাচিত মেম্বার সুরুজ্জামান বলেন, হামলায় আহতের অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যা ও বানোয়াট। তারাই ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।  শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আবুল খসরু মারা যান। ভোটকেন্দ্রের অস্থিতিশীল পরিবেশ মোকাবিলা করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। এ ছাড়া শ্রীপুরে গতকাল নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। বরমী ইউনিয়নের পরাজিত দুই মেম্বার প্রার্থী মারুফ শেখ মোক্তার ও শামীম আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাবনা : পাবনায় ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল সকালে চাটমোহর থানায় বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আলমগীর হোসেন মামলাটি দায়ের করেন। মামলার বাদী আলমগীর হোসেন এজাহারের বরাত দিয়ে বলেন, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ভাঙচুর নাশকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে অজ্ঞাত ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ : তাড়াশে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা পরাজিত প্রার্থীর ভাই আবদুল খালেককে (৪৬) কুপিয়ে জখম করেছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত খালেক পাঁচান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : গতকাল আশুগঞ্জ ও সরাইলে নির্বাচন-পরবর্তী পৃথক তিনটি সংঘর্ষে মহিলাসহ কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ সময় উভয় পক্ষের দাঙ্গাবাজরা কমপক্ষে ১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও দুটি মুদির দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৮৩ রাউন্ড রাবার ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। জানা যায়, গত ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন মাজু মিয়া আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। একই গ্রামের রোমান, সাদেক তার বিরোধিতা করেছিল। এর জের ধরে গতকাল সকাল ৭টার দিকে উভয় পক্ষের কয়েক শতাধিক দাঙ্গাবাজ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গ্রামের চারটি স্থানে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বসতঘর। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৪৫ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে নির্বাচনী বিজয় মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ৩০ জনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জেলার বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদে নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুর রহিম সুরত আলী বিজয়ী হন। বিজয়ী হওয়ার পর তার সমর্থকরা গতকাল বিজয় মিছিল করতে চাইলে পরাজিত প্রার্থী পার্শ্ববর্তী পুকড়া গ্রামের মিজানুর রহমান জুয়েলের সমর্থকরা বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের মেম্বার পদে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা। শনিবার রাতে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর বিজয় মিছিল থেকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৭ জন আহত হয়েছেন। শরীয়তপুর : সদর উপজেলার তুলাশার, বিনদপুর ও শৌলপাড়া ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় শতাধিক বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ১৬ জন। বিনদপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার লিটন মুন্সীর সমর্থকরা শনিবার সন্ধ্যায় বিজয় মিছিল বের করলে পরাজিত মেম্বার রাজ্জাক মুন্সীর সমর্থকরা হামলা করে লিটন মুন্সীর বাড়িঘর ভাঙচুর করে। গতকাল তুলাশার ইউনিয়নের বিজয়ী চেয়ারম্যান সমর্থকরা আওয়ামী লীগের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের দক্ষিণ গোয়ালদি, বড়াইল, দশরশি, উপরগাঁও, মৃধাকান্দি, বাইশরশি, চরপাতানিধি, সরদারকান্দি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। ঝিনাইদহ : কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের পর গতকাল বারইপাড়া গ্রামে বিজয়ী ও পরাজিত সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। নীলফামারী : নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় ১০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়ায় ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে পরাজিত দুই প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও আবদুল হামিদের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চারিতালুক এলাকায় কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলাসহ সহিংসতার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল চারিতালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু, হযরত আলী, সানাউল্লাহ, সবুজসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় আল-আমিন মিয়া, শামিম মিয়া, মাযাহার হোসেন, শাহজাহান মিয়া, মুকিম মণ্ডল, মিন্টু মিয়া ও আলী নেওয়াজ নামের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রূপগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (ওসি/তদন্ত) এ বি এম মেহেদী মাসুদ।

সর্বশেষ খবর