সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রাক-বাজেট আলোচনা

বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন খাতে উত্সাহিত করার সুপারিশ করেছেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা। বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে তারা মনে করেন। গতকাল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে এক প্রাক বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি থাকতে পারেননি। আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি আসন্ন বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানব সম্পদ উন্নয়ন, ভৌত-অবকাঠামো, কৃষি ও জ্বালানি খাতকে নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ছাড়া এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, ব্যাংকিং সচিব ইউনুসুর রহমান, ইআরডির সিনিয়র সচিব মেজবাহউদ্দিনও বক্তব্য রাখেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ইংরেজি দৈনিক নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন, সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-আর রশিদ, আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিকুর রহমান চৌধুরী এবং আমাদের সময় সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার। অনুষ্ঠানে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি জেঁকে বসেছে। ব্যাংকের অর্থ লুটেরাদের চিহ্নিত করতে পারলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না রাজনৈতিক কারণে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুণগত মান বজায় রাখার সুপারিশ করেন তিনি। দেশের ব্যাংক খাতের পাশাপাশি খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তাও দেখতে হবে। সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। এতে ফিলিপাইন সরকার যতটা তত্পর বাংলাদেশ সরকার ততটা তত্পর নয়। সে দেশের সংসদে এ বিষয়ে শুনানি হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে এ বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের আলোচনা না হওয়াটা হতাশাজনক। নঈম নিজাম বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নাজুক। বিশেষ করে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিরুত্সাহিত হচ্ছেন। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমান গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। এ ছাড়া একই প্রকল্প বার বার সংশোধন করে সরকারি ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। এটা বন্ধ করা প্রয়োজন। দেশের ব্যাংক খাতের জাল-জালিয়াতি কমিয়ে আনতে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন তিনি। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থবিভাগের তদারকি বাড়াতে হবে। ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে হলেও শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করার সুপারিশ করেন তিনি। নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সংবাদপত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। কেননা এটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। মানুষকে করদানে উত্সাহিত করতে প্রত্যেক শ্রেণির পেশাজীবীদের নিয়ে শীর্ষ করদাতার তালিকা প্রকাশের সুপারিশ করেন তিনি। সৈয়দ আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে বিদেশি টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে। এতে দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটাকে নিরুত্সাহিত করার সুপারিশ করেন তিনি। এ কে আজাদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ব্যাপকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটা কেটে গেলেও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। আগামী বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রায় সব ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ শতাংশের ওপরে। এটা খুবই হতাশাজনক। এ জন্য ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবার সুপারিশ ও প্রস্তাবনা শোনার পর অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে ফিরিয়ে আনতে সময় লাগতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির বিষয়টি সরকার খতিয়ে দেখছে, তবে সেটা ফিলিপাইনের মতো হয়তো নয়। আমাদের মতো করে ফলোআপ করছি। তিনি বলেন, ফিলিপাইন একবার বলে টাকা কালকেই দিয়ে দেবে, আবার বলে সময় লাগবে, এটা নিয়ে প্রথম থেকেই একটা সন্দেহ ছিল। এর হয়তো ব্যাখ্যা আছে, এটা হয়তো ইচ্ছাকৃত নয়, তাদের সিস্টেমটাই হয়তো এ রকম। তার মতে, গণতন্ত্র ও অর্থনীতির শৃঙ্খলার প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকা উচিত। অন্যান্য দেশেও তাই হয়। এ জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা থেকে সরকার নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে।

সর্বশেষ খবর