বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

হঠাৎ খুনোখুনিতে উৎকণ্ঠা

জুলকার নাইন

হঠাৎ খুনোখুনিতে উৎকণ্ঠা

হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে টার্গেট কিলিং বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে এগুলো ঘটাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারছে না। ফলে উৎকণ্ঠা আরও বাড়ছে। তাদের মতে, হঠাৎ এই খুনোখুনির মধ্যে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার মতলব থাকতে পারে। অপরাধগুলোর বিচার করতে না পারলে পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। জানা যায়, একই কায়দায় গত তিন দিনে চারজন খুনের শিকার হয়েছেন। সোমবার খুন হয়েছেন ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয়। তার দুই দিন আগে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার আগের দিন গোপালগঞ্জে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয় পরমানন্দ সাধু নামে এক পুরোহিতকে। চলতি মাসে ঢাকায় একইভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ। এর আগেও কয়েকজন লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের পাশাপাশি শিয়া, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিদেশি ও যাজক-পুরোহিতরাও আক্রান্ত হন। এসব হত্যাকাণ্ডের পর আইএস কিংবা আল-কায়েদার নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও তা ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ বলছে, বাংলাদেশি জঙ্গিরাই এসব ঘটাচ্ছে। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে খুনোখুনি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল  ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই এ ধরনের কথা বলেছেন। আশরাফ বলেছেন, এটা সরকার সহজে নেবে না। সরকার কারও ওপর আক্রমণ করে নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেউ বাঁচতে পারবে না। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। আর যারা এ ধরনের অপকর্ম ঘটাচ্ছে তাদেরও উদ্দেশ্য উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিবেশ বিনষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এটা দেশি-বিদেশি নানান চক্র হতে পারে। আবার উভয় শক্তি হাত মিলিয়েও করতে পারে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পরিস্থিতির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, পর পর খুনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এগুলোকে ঠেকানো যাচ্ছে না। কয়েকটি খুনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ঘাটতি থাকার বিষয়টি সামনে আনছে। তাতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোপুরি অবনতি ঘটেছে তা বলার কোনো সুযোগ নেই। তবে গোয়েন্দা তথ্যে ঘাটতি আছে। সঠিক সময়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকলে নিশ্চয়ই ঠেকানো যেত। তাই গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বিশেষ উদ্দেশ্যে ঘটানো এসব অপরাধ বন্ধ করতে আগের অপরাধগুলোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল। যে কোনো কারণেই হোক আগেরগুলোর পুরোপুরি বিচার সম্ভব হয়নি বলেই অপরাধীরা বারবার অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে হয়তো নতুন অপরাধের মাত্রা কমে আসত। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, যদি আগের ব্লগার হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত, দোষীদের শাস্তি দেওয়া যেত, তাহলে এখন এসব ঘটনা ঘটত না। বিচারে শৈথিল্যের প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই শৈথিল্য কেন, তা নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। প্রশাসনের মধ্যে ধর্মান্ধরা লুকিয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। থাকলে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানের মতে, বিশেষ উদ্দেশ্যে করা এসব অপরাধ বা খুন শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিকভাবে এটাকে ফেস করতে হবে। গোয়েন্দা তত্পরতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। একটা সামগ্রিক শান্তি আন্দোলন বা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত তৈরি করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর