বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপিতে এখন হচ্ছেটা কী

মাহমুদ আজহার

বিএনপিতে এখন হচ্ছেটা কী

বিএনপির ভিতরে-বাইরে কী হচ্ছে—তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের হাজারো প্রশ্ন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্রই এখন আলোচনার একটাই বিষয় বিএনপির ভিতরকার খবরাখরব কী? কৌতূহলের শেষ নেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। যেখানে জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুনসহ আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতির অবনতিতে সরকারের নেতিবাচক ভূমিকায় সরব থাকার কথা সেখানে ঘর সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে দলটি। নতুন করে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে দেশের অন্যতম এ জনপ্রিয় দল। শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ-অবিশ্বাস দানা বাঁধছে। একে অপরকে অরাজনৈতিক পথে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। ঢাকা-লন্ডন সর্বত্রই দলের ভিতরকার সমস্যা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, দলের ভিতরে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে বিব্রত খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। সোমবার রাতেও তিনি দলের তিন সিনিয়র নেতার সঙ্গে এ নিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কথা বলেন। কয়েকদিনের ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও তিনি। অভ্যন্তরীণ সংকট অতি দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন বেগম জিয়া। দলের ভিতরের অবস্থা গণমাধ্যমে কীভাবে প্রকাশ পায় তা দেখভালের জন্যও সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যাতে হাইকমান্ডের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সিনিয়র সব নেতাকেই একে অপরের বিরুদ্ধে জড়ানো হচ্ছে। নেতৃত্বে ফাটল ধরানো হচ্ছে। একে অপরকে ঘায়েল করতে হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। এ সুযোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। যার কারণে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত অবনতির পরও বিএনপি এর প্রতিবাদে সরব ভূমিকা পালন করতে পারছে না। জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপির নির্বাহী কমিটির (আংশিক) ঘোষণা করা হয়। এতে পদবঞ্চিতদের একটি অংশ পরোক্ষভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। এরপরই শুরু হয় একে অপরের দোষারোপ। আলোচনায় উঠে আসে পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়েও। মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে বলে দলের একটি অংশ দাবি করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অবশ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছে, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে তারা দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। দলের শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। জানা যায়, ইউপি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠায় বিএনপি প্রধানকে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তদন্ত চলাকালে তিনি দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন বলেও চেয়ারপারসনকে জানান। তবে এতে রাজি হননি বেগম জিয়া। তিনি ওই নেতাকে বলেন, ‘দায়িত্ব আমি দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে আমি দেখব।’ কে কী বলল তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্রমতে, বিএনপির দফতর শাখাকে ঘিরে দলের মধ্যসারির নেতাদের মধ্যে অপরাজনীতি চলছে। দফতর বিভাগে কারা নতুন করে আসবেন, কারা চলে যাবেন—তা নিয়ে সিনিয়র নেতারাও একে অপরের বিরুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। মধ্য সারির বেশ কয়েকজন নেতাই চান দফতর বিভাগে কাজ করতে। আবার বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও সেখানে থাকতে চান। এ নিয়েও চলছে নেতাদের মধ্যে রাজনীতি। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদনের পর সোমবার রাতে এক বিবৃতি দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিবৃতিতে তিনি বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তার নির্দেশনায় বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য নেতা-কর্মীরা কাজ করছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কাজ করছে। এ আন্দোলনে বিএনপিসহ অন্য সব গণতান্ত্রিক শক্তি সফল হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর কিছু সময় আগে আরেক বিবৃতিতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহানকে নির্বাচন মনিটরিং ও পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে মর্মে কিছু কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। মহল বিশেষ হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের সংবাদ প্রচার করছে। বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান এখনো ইউপি ও পৌর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সংবাদ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কাল্পনিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর