শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিচারাধীন আরও ১১ আপিল

আহমেদ আল আমীন

বিচারাধীন আরও ১১ আপিল

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর চূড়ান্ত আইনি লড়াই শেষ হয়েছে ৫ মে। এভাবে উচ্চ আদালতে ইতিমধ্যে মোট সাতটি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে চূড়ান্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষে চারজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসির আসামি মীর কাসেম আলীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ হয়নি। আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউর শুনানি এখনো শুরু হয়নি। এ অবস্থায় আপিল বিভাগে এখনো বিচারাধীন রয়েছে আরও ১১টি আপিল। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মো. মোবারক হোসেনের আপিলের শুনানি হতে পারে সবার আগে। একাত্তরে হত্যা, অপহরণ ও ষড়যন্ত্রের দায়ে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর তিনি আপিল করেন। আপিল দায়ের করার দিক থেকে এই মামলাটিই এখন সবচেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুট ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এসব মামলায় আসামিদের বিচার হয়। রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করার বিধান রয়েছে।

জানা গেছে, আপিল বিভাগে আরও বিচারাধীন রয়েছে জামায়াত নেতা আবদুস সোবহান, এটিএম আজহারুল ইসলাম, এরশাদ আমলের সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, পিরোজপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের খান মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ও সিরাজ মাস্টার, নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর আপিল। এর মধ্যে সিরাজ ও ফোরকানের মামলায় জেল আপিল হয়েছে। জব্বারের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। আবদুল জব্বার, আকরাম ও মাহিদুরকে ট্রাইব্যুনাল আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। অন্যরা বিচারিক ওই আদালতে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন। আপিল বিভাগে নিষ্পন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ক্রমানুসারে একটির শুনানি শেষে পরবর্তী মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। এই হিসেবে নিজামীর পরে এখন মোবারকের আপিলের শুনানি হতে পারে। মোবারকের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হলেও বিচারিক আদালতে প্রমাণিত হয়েছে দুটি অভিযোগ। প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি তিনটি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। একাত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপরাধ সংঘটন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নয়াদিল গ্রামে মোবারকের বাড়ি। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে জড়িত হন তিনি। বহিষ্কৃত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন মোবারক। বহিষ্কৃত হন আওয়ামী লীগ থেকেও। মোবারকের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের ২২ আগস্ট  মোবারক হোসেনসহ অন্য রাজাকাররা আখাউড়ার টানমান্দাইল গ্রামে সভা ডাকেন হাজী নূর বকশের বাড়িতে। গ্রামের ১৩০-১৩২ জনকে জড়ো করা হয় সেখানে। ওই গ্রামবাসীদের আটক করে গঙ্গাসাগর দীঘির কাছে পাকিস্তানি  সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন করেন মোবারক ও তার সহযোগীরা। টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের সাতজনকে নিয়ে যাওয়া হয় তেরোঝুড়ি হাজতখানায়। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ওই ৩৩ জনকে গুলি করে হত্যার পর মাটিচাপা দেয় গর্তে। এ অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় মোবারককে। তৃতীয় অভিযোগ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেক মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করতেন নানাভাবে। ১১ নভেম্বর রাতে মোবারক সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে অপহরণের পর সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন খালেককে। পরে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয় তাকে। এ অভিযোগে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে মোবারককে। একাত্তরে মোবারক ও তার সহযোগীদের হাতে নিহত আবদুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩ মে একটি মামলা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারিক হাকিম আদালতে। ওই বছরের ১৩ মে হাইকোর্ট থেকে ছয় মাসের আগাম জামিন নেন তিনি। এরপর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয় কয়েক দফা। হাইকোর্টের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করলে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর মোবারক হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে মামলার নথিপত্র পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ২০১২ সালের ৬ জুন আসামি পক্ষের আইনজীবী আপিল মোকদ্দমা করলে এ মামলার নথি তলব করেন ট্রাইব্যুনাল। মোবারকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ওই বছরের ১৬ জুলাই থেকে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর