শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সমস্যা অনেক, তবুও সমাধানের চেষ্টা

দুই মেয়রের বছরপূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমস্যা অনেক, তবুও সমাধানের চেষ্টা

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করেছেন ঢাকার নগর গবেষক ও বিশ্লেষকরা ।

তারা বলেছেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সফল করতে হলে সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। তারা বলেন, সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থায়িত্ব পাবে না। নগর গবেষকরা বলেন, দুই মেয়র তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। তাদের সময় দিতে হবে ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তবে উত্তর ও দক্ষিণের মেয়ররা যেসব কাজ করছেন তা যেন দৃশ্যমান হয় সে চেষ্টা করতে হবে, তবেই নগরবাসী ভরসা পাবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, শিক্ষাবিদ ও নগর গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করি, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের চেয়ে কাজের দিক দিয়ে উত্তরের মেয়র আনিসুল ইসলাম এগিয়ে আছেন। তার মতে, নাগরিক সেবা বৃদ্ধি, পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ ও ড্রেন পরিষ্কার ইত্যাদি কাজে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো কাজ করছেন মেয়র আনিসুল হক। এ অধ্যাপক মনে করেন, এখন আনিসুল হক যে গতিতে কাজ করছেন তা ধরে রাখতে পারলেই নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। অধ্যাপক নজরুল ইসলামের মতে, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন হকার উচ্ছেদের বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন হকার উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়েছেন। এতে কোনো ফল আসেনি। তার মতে, হকার উচ্ছেদের চেয়ে নগরীর অন্য বিভিন্ন সমস্যা যেমন— রাস্তাঘাট সংস্কার, সুয়ারেজের লাইন পরিষ্কার করার মতো বিষয়গুলোকে সাঈদ খোকনের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। যাতে করে নগরবাসী নিবিঘ্নে চলাচল করতে পারে। এই গবেষক বলেন, আমাদের মেয়রদ্বয়ের ওপর সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয় নেই। ভালো কাজ করতে হলে সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় দরকার। একটি জায়গায় একই সঙ্গে ওয়াসা, ডেসা, ডেসকো ও সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করছে। কিন্তু একজনের অধীনে যদি কাজ করা সম্ভব হতো তবে কোনো সমস্যা হতো না। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ আলাদা আলাদা করে কাজ করায় মেয়রদের ভালো কাজ করার সময় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন বিভাগ ম্যানেজ করেই কাজ করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে মেয়রদের সহযোগিতা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি মেয়রদের প্রধান সমন্বয়কারী রেখে অন্যান্য বিভাগ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাপেক্ষে যথাসময়ে কাজ শেষ হবে বলে মনে করি। একই সঙ্গে উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের ঢাকা থেকে জলাবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে নজরুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। এ জন্য মেয়রদেরও সময় দিতে হবে। তারা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কাজ শেষ করতে পারবেন বললেই যে এসব কাজ বর্ষায় শেষ হবে এমন নয়।

নগরবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের মেয়ররা যেসব কাজ করছেন তা যেন দৃশ্যমান হয় সে চেষ্টা করতে হবে তবেই নগরবাসী ভরসা পাবে। কিন্তু ৫৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকার দুই মেয়রকে কাজ করতে হয়। দুই মেয়রের হাতে ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে আইনগত ক্ষমতা নেই। মেয়র হিসেবে ট্যাক্স সংগ্রহ, রাস্তাঘাট ঝাড়ু দেওয়া ও মশা দূর করা ছাড়া তাদের তেমন ক্ষমতা নেই। তবে উত্তরের মেয়র একটি কাজ করেছেন যা প্রশংসনীয় তা হলো পুরাতন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে সে স্থান থেকে তিনি বিলবোর্ড অপসারণ করতে পেরেছেন। এ ছাড়া মেয়ররা অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমার মতে, আনিসুল হক যে কাজগুলো করছেন তা দৃশ্যমান। যেমন সুন্দর টয়লেট স্থাপন, তেজগাঁও থেকে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ। অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন যে কাজগুলো করছেন তা দীর্ঘমেয়াদি। যেমন বিশেষজ্ঞ মতামতের ওপর ভিত্তি করে তিনি নগরের জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করছেন। তিনি যদি এ কাজটি সঠিকভাবে করতে পারেন তবে আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে। এ ছাড়া আনিসুল হক যানজট দূর করতে প্রাইভেট কার ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা শুরুর জন্য একটি বাস সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছেন। যা একটি কোম্পানির অধীনে না রেখে দুই থেকে তিনটি কোম্পানির আওতায় রাখা হবে। তবে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, এ দুই মেয়রের কেউই এখনো নগর থেকে মশা দূর করা ও ঢাকার রাস্তা থেকে বর্জ্য দূর করতে পারেননি। তবে তারা এ জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে হলে জনগণকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মেয়র ও জনগণ একসঙ্গে কাজ করলে আগামী এক বছরের মধ্যে ঢাকার রাস্তায় আর বর্জ্য দেখা যাবে না। বিশিষ্ট স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ বলেছেন, ঢাকার দুই মেয়র চেষ্টা করছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তারা নগরের উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এই উন্নয়ন কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই হচ্ছে। ফলে উন্নয়নের সুফল নাগরিক হিসেবে আমরা পাচ্ছি না। এই এক বছরে তারা যদি কাজ না করে ঢাকার উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা করতেন তাহলে বাস্তবায়ন করতে সময় লাগত না। এখন পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন মানুষের কতটুকু কাজে লাগছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। একসঙ্গে ঢাকার সব রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। এতে মানুষের যে ভোগান্তি, সময় নষ্ট হচ্ছে, অতিরিক্ত জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে। নগর উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে আগে। বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে বাস্তবায়ন করতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে যদি চার বছর ধরে ভোগান্তি হয় শেষের এক বছর আমরা সুফল ভোগ করি তাতেও কোনো সফলতা নেই। আমরা প্রতিদিন ভালো থাকতে চাই। তিনি বলেন, ঢাকার প্রধান সমস্যা পরিবেশ দূষণ। ভাঙা রাস্তা, অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, মশার উৎপাত এসব থেকে মানুষ মুক্তি পায়নি। একদিনে ঢাকা সিঙ্গাপুর, নিউইয়র্কের মতো করা যাবে না। কিন্তু তাই বলে কখনোই ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নতি হবে না, এটা তো নয়। সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা আছে। তবে সিটি করপোরেশনের যে ক্ষমতা আছে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। দুই মেয়র এই এক বছরে যা করেছেন তার সুফল পেতে আমাদের আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই অপেক্ষার সময় আরও সমস্যা তৈরি হবে। তাই সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নগরের উন্নয়ন করা উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর