শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

কারাগারে নিজামীর সঙ্গে দেখা করলেন স্ত্রী-সন্তানরা

গাজীপুর প্রতিনিধি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে ও পুত্রবধূরা গতকাল দেখা করেছেন। আইনি লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হওয়ার পর নিজামীর সঙ্গে তার পরিবারের এটিই প্রথম ও নিয়মিত সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এর সুপার প্রশান্তকুমার বণিক জানান, মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে তার স্ত্রীসহ পরিবারের ছয় সদস্য সাক্ষাৎ করেছেন। এটি তাদের নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ। মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তার স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার নিজামী, ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও নাঈমুর রহমান, পুত্রবধূ ছালোয়া ও রাইয়ান এবং মেয়ে মোহসিনা ফাতেমা গতকাল বেলা ১১টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এ আসেন এবং আবেদন করেন। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের নিজামীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। তারা বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে নিজামীর সঙ্গে দেখা করেন এবং কারাগারের একটি কক্ষে ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ৪০ মিনিট কাটিয়েছেন। এ সময় তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ও পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎ শেষে নিজামীর পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে কারা চত্বর ত্যাগ করেন। নিজামী এ কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দী আছেন। তবে তারা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেননি। কারাগার-২-এর জেলার নাসির আহমেদ জানান, আদালতের রায়ের কপি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত পৌঁছেনি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পৌঁছানোর পর নিজামীকে ওই রায় আনুষ্ঠানিকভাবে শোনানো হবে। এরপর তিনি (নিজামী) প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্টদের জানাবেন। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে বসে যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী তার রিভিউ খারিজের রায়ের খবর রেডিওতে শোনেন। ওই খবর শোনার পর থেকে তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো আইনি বাধা নেই। এখন শুধু একটা ধাপ বাকি আছে। তা হচ্ছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এ বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে অর্থাৎ প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হলে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন তাহলে সরকার যে কোনো সময় তার দণ্ড কার্যকর করবে। উল্লেখ্য, ১৯৭১-এ হত্যা, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাধিক মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আলবদর বাহিনী প্রধান নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া প্রাণদণ্ডের সাজা বহাল রেখে গত ৬ জানুয়ারি আপিলের রায় ঘোষণা করেন আদালত। ১৬ মার্চ কারাগারের কনডেম সেলে নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়। পরে আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেঞ্চ ওই রিভিউ খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিভিউ খারিজ হওয়ায় তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকছে। ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ’৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি হত্যা, ধর্ষণ, বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে একাধিক মানবতাবিরোধী অপকর্ম করেন। ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মন্মথপুর গ্রামে মতিউর রহমান নিজামী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০০ সালে জামায়াতের মূল নেতৃত্বে আসেন।

সর্বশেষ খবর