শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

পার পাচ্ছেন মনোনয়ন বণিকরা, আতঙ্কে ফরিয়াদিরা

রফিকুল ইসলাম রনি

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা, এমপিদের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের তীব্র অভিযোগ ওঠায় দলের নীতিনির্ধারকরাও রীতিমতো বিব্রত। দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে হাইব্রিড আওয়ামী লীগার, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও তাদের সন্তানরা এমনকি জেএমবি সদস্যরা নৌকা প্রতীক পেয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। ‘মনোনয়ন বণিকদের’ বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও বাণিজ্যে জড়িতরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। ‘নৌকা প্রতীক’ পাইয়ে দেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করে লাখ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও তারা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু তাই নয়, মনোনয়ন বাণিজ্যে যুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ফরিয়াদিরা এখন নতুন আতঙ্কে ভুগছেন। দেশে প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন— ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর জেলা-উপজেলা ও কেন্দ্রের কিছু নেতা ‘মনোনয়ন বণিক’ হয়ে গেছেন মর্মে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করার পর কমিটির সামনে নষ্টামির প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন অভিযোগকারীরা। জানা গেছে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চাকে আরও প্রসারিত করতে ইউনিয়ন/পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়ার ভার তৃণমূলের ওপর অর্পণ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এজন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন/পৌরসভা/উপজেলা-থানা এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দলীয় প্রার্থীর নাম চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছিল ইউনিয়ন নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা করে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে থানা/উপজেলায় জমা দেবেন। উপজেলার সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষর করে জেলায় পাঠাবেন এবং জেলা নেতারা কেন্দ্রে জমা দেবেন। পৌরসভা নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হলেও ইউপি নির্বাচন শুরু হওয়ার পর ব্যাপক অনিয়ম শুরু করেন উপজেলা ও জেলা নেতারা। বর্ধিত সভা বা তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দের বা ৫ লাখ থেকে শুরু ৫০ লাখ টাকা নিয়ে প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠান। এ ক্ষেত্রে নব্য আওয়ামী লীগার, কোথাও কোথাও জামায়াত-বিএনপির নেতা আবার কোথাও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার বা তাদের সন্তানদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নৌকা। এ নিয়ে প্রথম ধাপের ইউপি ভোট গ্রহণ শুরুর দিন থেকেই অভিযোগের স্তূপ জমা পড়তে থাকে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা হলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু ও কার্যকরী সদস্য সুজিত রায় নন্দী। তদন্ত কমিটি যারা অভিযোগ করেছিলেন তাদের তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে নির্দেশ দেন। এ ছাড়াও যাদের নামে অভিযোগ উত্থাপন হচ্ছে তাদের ব্যাপারে নানাভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রায় সাত দিন পার হয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে। একাধিক অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত কমিটি মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রমাণ হাতে চাচ্ছে। তারা বলছেন, যারা ঘুষ নেন বা ঘুষ দেন তারা কোনো প্রমাণ রাখেন না। তাই প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মনোনয়ন বাণিজ্য যে হয়েছে, তা তদন্ত কমিটিও বিশ্বাস করে, কিন্তু প্রমাণ হাজির করতে না পারায় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন না বলে আমাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু অভিযোগকারীর কাছে তথ্য থাকার পরও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় প্রমাণ হাজির করতে সাহস পাচ্ছেন না। তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যাদের নামে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল, তাদের ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে অভিযোগকারীরা অকাট্য প্রমাণ দিতে পারছেন না।’

সর্বশেষ খবর