শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

চাপাতি বোমার আঘাত থেকে কেউ মুক্ত নয়

রুহুল আমিন রাসেল

চাপাতি বোমার আঘাত থেকে কেউ মুক্ত নয়

হায়দার আকবর খান রনো

দেশে নির্বাচন বলে আর কিছু নেই, এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি—সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো। প্রবীণ এই রাজনীতিকের মতে, ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুন, এক কথায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দারুণভাবে বেড়ে গেছে। আজ সশস্ত্র মৌলবাদীদের চাপাতি ও বোমার আঘাত থেকে কেউ মুক্ত নয়। এমন প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার মানে গণতন্ত্র সংকুচিত করা। দেশের সামগ্রিক অবস্থা, গণতন্ত্র ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই বামপন্থী নেতা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক। একদিকে গণতন্ত্র ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে, অন্যদিকে মৌলবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর তত্পরতার বিস্তার ঘটছে।

গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি নির্বাচন উল্লেখ করে হায়দার আকবর খান রনো বলেন, আমি যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গটি বাদও দিই, তাহলে পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচনসমূহ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন একতরফা হলেও সাংবিধানিকভাবে তা অবৈধ ছিল না। কিন্তু পরবর্তী উপজেলা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যা হলো— তাতে দেশে নির্বাচন বলে আর কিছু নেই। কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের দেওয়া এক বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজেই বলেছেন, ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেলে কি তারা রাষ্ট্রক্ষমতা হারাত? অর্থাৎ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নিজেই এ ধরনের কারচুপি মেনে নিতে পারেননি। ষাটের দশকের তুখোড় এই ছাত্রনেতার মতে, গণতন্ত্রের যেসব ভিত্তি, দেশে তাও দারুণভাবে অনুপস্থিত। ক্রসফায়ার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুন, এক কথায় দেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দারুণভাবে বেড়ে গেছে। সরকারের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিও আজ পর্যুদস্ত। কারণ, বিএনপিও তাদের আমলে গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করেনি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে অবৈধভাবে খুন ও নির্যাতন করা হয়েছিল। তারও কোনো বিচার হয়নি। তখন নির্যাতনকারী ও হত্যাকারীদের জন্য সংসদে আইন করে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তাই সেই বিএনপি যখন গণতন্ত্রের ডাক দেয়, তখন তার পেছনে মানুষ জমায়েত হয় না। হায়দার আকবর খান রনো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আরেকটি দৃশ্য হলো, সশস্ত্র মৌলবাদীদের উত্থান। একের পর এক ব্লগার হত্যা, লেখক ও প্রকাশক হত্যা, শিক্ষক হত্যা, শিয়া মুসলমান, খ্রিস্টান ধর্মযাজক, মন্দিরে পূজারত হিন্দু নর-নারী, তাজিয়া মিছিলে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমান থেকে শুরু করে কেউই আজ চাপাতি ও বোমার আঘাত থেকে মুক্ত নয়। খুন হচ্ছেন বিদেশিরাও। এ পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাঙা রেকর্ডের মতোই বলে চলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো। এ ছাড়াও সরকারি দলের মস্তান ও নেতা-উপনেতার দাপট, লুটপাট এবং সশস্ত্র কারবার একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গাইবান্ধার এমপি হাসতে হাসতে ১২ বছরের এক ছেলেকে গুলি করেও বহাল তবিয়তে নিজ এলাকায় রাজত্ব করছেন। লুটের ভাগ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে খুনোখুনিতে মাতৃগর্ভের শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গণমাধ্যমে সরকারের নিয়ন্ত্রণ গণতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন এই কমিউনিস্ট নেতা। তিনি বলেন, গণতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখতে হলে গণমাধ্যমকে পরিপূর্ণ স্বাধীন ও মুক্ত করতে হবে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা মানে হলো গণতন্ত্র সংকুচিত করা। আমি আশা করব, সরকার এ প্রয়াস থেকে দূরে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর