সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

পাচার রোধে এপিজির ১১ শর্ত

আলী রিয়াজ

পাচার রোধে এপিজির ১১ শর্ত

বিদেশে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশকে ১১ শর্ত পূরণ করতে বলেছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। এসব শর্তের মধ্যে এলসি জালিয়াতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিব্যবস্থা উন্নত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সব ব্যাংক শাখার কার্যক্রম একই সার্ভারে নিয়ে আসা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ, পরিপূর্ণ গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ, ব্যাংকবহির্ভূত লেনদেন বন্ধ, ঋণমান ও আদায়হার উন্নীতকরণসহ ১১ শর্ত পূরণে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অর্থ পাচার এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংককে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তিন দিনব্যাপী বৈঠক করে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২ মে বাংলাদেশ সফরে আসেন চার সদস্যের এপিজি দল। দলটি বাংলাদেশের আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণকারী একাধিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে অংশ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)সহ একাধিক সংস্থা। এপিজি কর্মকর্তাদের কাছে অর্থ পাচার রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির কর্মকর্তারা অর্থ পাচারে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা জানিয়েছে। সংস্থাটি অর্থ পাচার রোধ আইনের প্রশংসা করলেও ব্যাংকিং কার্যক্রমে নজরদারির ক্ষেত্রে দুর্বলতার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের এলসি বাণিজ্য নিয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এসব পাচারের সঙ্গে একাধিক ব্যাংক ও কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা বলেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো গ্রামীণ শাখা থেকে এলসি খুলে তার মাধ্যমে পণ্য আমদানি করছে। সেসব শাখা কখনই পরিদর্শন করা হয় না। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর এসব শাখার মাধ্যমে বিশাল অর্থ পাচার করা হচ্ছে। তারা বলেছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্স লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ যেসব ব্যাংক রেমিট্যান্স গ্রহণ করে তারা দেশ থেকে গ্রাহককে অর্থ দিলেও রেমিট্যান্সের অর্থ দেশে আনেন না। যে দেশ থেকে অর্থ গ্রহণ করা হয় সে দেশেই রাখা হচ্ছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এপিজি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ঝুঁকিও বেড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণেই বিভিন্ন সময় আর্থিক দুর্নীতি ঘটছে। ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। দেশের কয়েক হাজার শাখার তথ্য একসঙ্গে পেতে হলে সব ব্যাংক কার্যক্রম একই সার্ভারের মধ্যে আনতে হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম এখনো একই সার্ভারে নেওয়া যায়নি। যেখানে বিশ্বের বড় অর্থনীতির সব দেশের ব্যাংক শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একই সার্ভারে নিয়ে আসা হয়েছে। একই সার্ভারে আনা না গেলে অর্থ পাচার ও আর্থিক দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশকে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হলে এপিজির সব শর্ত পূরণ করতে হবে। আগামী জুলাইয়ে বিশ্বের সব দেশের অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দেশগুলোর সূচক প্রকাশ করা হবে। ওই সূচকে নিচের দিকে থাকলে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় থাকলে আন্তর্জাতিক লেনদেনে বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে পড়তে হতে পারে। এপিজির বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর এপিজির সহায়তা চেয়েছেন। এপিজি এ ঘটনার পর ফিলিপাইনকে চাপ দিয়েছে অর্থ উদ্ধার করে সে অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার জন্য। জানতে চাইলে বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রাসাদ দেবনাথ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এপিজির কর্মকর্তারা অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। তাদের কাছে গত তিন বছরে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ৪০টি ইস্যু নিয়ে আলোচনায় তারা কয়েকটি বিষয় আমাদের পূরণ করতে বলেছেন। আমরা ইতিমধ্যে অনেক কিছু পূরণ করেছি। তবে অনেক ইস্যু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান আছে, যা দ্রুত আমরা করে ফেলব। রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারেও এপিজি আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের মাধ্যমে ফিলিপাইনকে এ বিষয়ে চাপ দিয়েছি।’

সর্বশেষ খবর