সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
হরতাল ডেকে মাঠে নেই জামায়াত

ঢাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ-গুলি রণক্ষেত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পর তার দলের ডাকা হরতালে ঢাকার রাজপথে কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার কোথাও জামায়াত-শিবির কর্মীদের তেমন কোনো তত্পরতা বা মিছিল-পিকেটিং চোখে পড়েনি। একই চিত্র ছিল চট্টগ্রাম, বরিশাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়। এদিকে রাজধানীর শাহআলীতে হরতালবিরোধী মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই এমপির সমর্থকের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার ?বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া ২৪ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি শেষ হয়েছে আজ সোমবার সকাল ৬টায়। সরেজমিন দেখা যায়, হরতালে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পল্টন, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররম ও দৈ?নিক বাংলার মোড়সহ রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে পু?লিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের টহল ভ্যান রাস্তায় জনসাধারণের যাতায়াতকে নি?র্বিঘ্ন করতে বি?ভিন্ন রাস্তায় টহল দেয়। দায়িত্ব পালন করে র‌্যাব সদস্যরাও। দিনের শুরুতে রাস্তায় ব্যক্তিগত যানবাহন ও গণপরিবহন অন্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় গাড়ির সংখ্যা। হরতালের কারণে গতকালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়। গতকালের পরীক্ষা আজ অনুষ্ঠিত হবে। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমের পরীক্ষাগুলো ২২ মে নেওয়া হবে। রাজধানীর মহাখালী এলাকায় যানজট ছিল লক্ষণীয়। সকাল থেকেই এ ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। হরতালে শুধু মহাখালীই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা গেছে অন্য দিনের মতোই। অফিসমুখী যাত্রীদেরও ভিড় ছিল লক্ষণীয়। খোলা ছিল বিপণিবিতানসহ ব্যাংকপাড়া। সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের বাসগুলো ছেড়ে যায়।

আওয়ামী লীগ-যুবলীগ রণক্ষেত্র, সংঘর্ষে আহত ২৫ : মিরপুর ১ নম্বরে হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়াসহ গুলির ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ১৪ জন হাসপাতাল ছেড়ে গেলেও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন ভর্তি রয়েছেন। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। গতকাল দুপুরে এ ঘটনার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্স, শাহআলী মার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে এ সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত থাকলেও তার?া নীরব ভূমিকা পালন করেন। সংঘর্ষে আহতরা হলেন— মনোয়ার হোসেন, মনির হোসেন, শাহআলী ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন, যুবলীগ কর্মী শামীম হোসেন, জাকির হোসেন, আল-আমিন, ইমন, হাবিব, কোরবান, আবুল কালাম, রাফি, সুজন, শুভ, সবুর আলী ও ইব্রাহীম। আহতদের মাথা, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়রা গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। আহতরা বলেছেন, শাহআলী থানা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জামায়াতের ডাকা হরতালের প্রতিবাদে মিছিল বের করতে শাহআলী মার্কেটের সামনে জড়ো হন। তারা শাহআলী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক শুভর নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে মিরপুর-১ এর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল আসে। দুটি মিছিল পরস্পর মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, এমপি আসলামুল হকের নেতৃত্বে মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় মুক্ত বাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। তারা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নেতৃত্বে আরেকটি হরতালবিরোধী মিছিল রাস্তা অতিক্রম করছিল। তখন দুই পক্ষ সামনাসামনি হলে সংঘর্ষ বাধে, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময় হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে ফাঁকা গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আসলামুল হকের সমর্থক ও শাহআলী থানা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, এমপি তুহিনের নেতৃত্বে মিছিল থেকে প্রথম হামলা করা হয়। অন্যদিকে, সাবিনা আক্তার তুহিন সাংবাদিকদের জানান, আসলামুল হকের সমর্থকরাই প্রথমে তাদের মিছিলে হামলা করেন। ঘটনাস্থলে তুহিনের লোকজনের অভিযোগ, আসলামুল হকের সমর্থকদের হামলায় তাদেরও কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, ঢাকা মহানগীর ১৪ নম্বর আসন নিয়ে এমপি আসলামুল হকের সঙ্গে সাবিনা আক্তার তুহিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। দুজনই ওই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ নম্বর আসনে দলের পক্ষ থেকে আসলামুল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবিনা মনোনয়নের জন্য মাঠের দখল নিয়ন্ত্রণে রাখতে তত্পর তিনি। পুলিশের মিরপুর বিভাগের এডিসি জসিম উদ্দিন বলেন, হরতালবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর