সোমবার, ৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বহুস্তর ভ্যাটহার চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন বাজেটে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য টার্নওভার ট্যাক্স বহাল রাখা হচ্ছে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন পর্যন্ত মোট লেনদেনের ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার ট্যাক্স রয়েছে, যা নতুন অর্থবছরেও বহাল রাখা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে ব্যবসায়ীদের প্রধান দাবি খাতওয়ারী বিভিন্নহারে (বহুস্তর) ভ্যাট আরোপের দাবি মেনে নেননি অর্থমন্ত্রী। তা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বিকালে সচিবালয়ে ভ্যাট আইন সংশোধনের দাবিতে ব্যবসায়ী নেতারা অনেকটা চেপে ধরেন অর্থমন্ত্রীকে। তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ভবিষ্যৎ পরিণতির আগাম বার্তা তুলে ধরেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে বাণিজ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভ্যাট আইন সংশোধন নিয়ে অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), অর্থবিভাগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে। নীতি-নির্ধারকদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এই বৈঠকের আয়োজনেই আইনটি সংশোধন হবে বলে আশা জাগে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পরে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তাদের অনেকগুলো দাবি জানিয়েছেন, তার মধ্যে একটা হলো টার্নওভার ট্যাক্স বহাল রাখা। সেটা হবে। তারা সবার জন্য ১৫ শতাংশের বদলে মাল্টিপল (বহুস্তর) ভ্যাট হারের প্রস্তাব করেছেন। এটাই তাদের প্রধান দাবি। আমরা তা বিবেচনা করছি।’ মুহিত বলেন, ভ্যাট আইন আগামী ১ জুলাই থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে। এখান থেকে পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে এই আইন কার্যকর করা বা সংশোধন করার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই। ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে বিকাল চারটার দিকে অর্থমন্ত্রী তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ওই সময় বৈঠকে যোগ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ব্যবসায়ী নেতা সালমান এফ রহমান, একে আজাদ, কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. জসিম উদ্দিন। বৈঠকে অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ঘণ্টা দুই বৈঠক করে ব্যবসায়ী নেতারা বের হয়ে আসেন। তখন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সবার জন্য ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ না করে খাতওয়ারী ৮ শতাংশ, ১০ শতাংশ, ১২ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছি। আমাদের এই প্রস্তাব মেনে নিলে ৮০ লাখ টাকার উপরে টার্নওভারের ক্ষেত্রে নতুন ভ্যাট আইন আমরা মেনে নেব। পরে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, এনবিআর ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ কমিটির সাত দফা সুপারিশ মেনে নিয়ে ভ্যাট আইন কার্যকর করতে বলেছি আমরা। অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কথা শুনলেও কোনো আশ্বাস দেননি। তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাজেটের আগে নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর আর কোনো বৈঠক হবে না। এখন মন্ত্রী সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে অনেক ভালো দিকও আছে। এটি কার্যকর করলে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে আমরা ভালোর দিকে পৌঁছাতে পারব, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করবে। ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের পর তা সংশোধনের জন্য যদি আলোচনা হতে পারে, তাহলে তা সংশোধন করা কঠিন কিছু নয়। আইএমএফের শর্তে ভ্যাট আইন প্রণয়নের পর তা সংশোধন করা হলে ওই শর্তের লঙ্ঘন হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ভিন্ন ইস্যু। এই দেশ আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয় না। আমরা পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় নির্মাণ করছি, আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের টাকায় নয়। তাই তাদের নির্দেশনা মতো দেশ চলবে না। বৈঠক শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে বের হয়ে এসে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীকে আমরা সমস্যার কথা জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশার কথাও শুনাননি, নিরাশারও কোনো কারণ নেই। মন্ত্রী বলেছেন, আমাকে একটু দেখতে দেন।’ এক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশ করে বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রীকে বলেন, ‘গতবার আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাট আরোপ করেছিলাম। তবে আন্দোলনের কারণে সেখান থেকে পিছু হটতে হয়েছে। তাই আমাদের এমন কোনো আইন করা উচিত নয়, যেখান থেকে আবার পিছু হটতে হয়।’ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, গ্রামের একজন দোকানদার তিনি কীভাবে তার আয়-ব্যয়, কেনা-বেচার হিসাব রেখে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করবেন? তিনি ভ্যাট আইন সংশোধন করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বৈঠকে বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এফবিসিসিআই ও এনবিআর যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাতটি সুপারিশ করেছে। ওইসব সুপারিশ ভ্যাট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কথা। সেগুলো আপনার কাছেও রয়েছে, এনবিআরের কাছেও রয়েছে। তারপরও ভ্যাট আইন নিয়ে আমাদের এতবার বসতে হবে কেন? তাহলে কি ওই কমিটির কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না? এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, বৈঠকে সব ব্যবসায়ীই এনবিআর-এফবিসিসিআইয়ের যৌথ কমিটির সাতটি সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি করেছেন। নতুন যে ভ্যাট আইন করা হয়েছে, সেই আইন সম্পর্কেও ব্যবসায়ীদের কোনো ধারণা নেই।

সর্বশেষ খবর