বুধবার, ১১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

যে দেশের জন্ম চাননি তারই পতাকা উড়ত নিজামীর গাড়িতে

আহমেদ আল আমীন

যে দেশের জন্ম চাননি তারই পতাকা উড়ত নিজামীর গাড়িতে

যে দেশের জন্ম চাননি, যে দেশের অভ্যুদয় পণ্ড করতে সব রকম নিষ্ঠুরতা প্রয়োগ করেছেন, কালক্রমে সে-ই বাংলাদেশের মন্ত্রী হলেন, তার সরকারি গাড়িতে পত্পৎ করে উড়ত জাতীয় পতাকা। সে সময় ছিঃ ছিঃ করেছে মানুষ। কিন্তু শত নিন্দা ও ভ্রুকুটি গায়ে মাখতেন না তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধে অবশেষে ফাঁসিতেই ঝুললেন জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী। এর আগে জীবনের শেষ বেলায় দুই হাজার ১৪৩ দিন কাটালেন কারাগারেই। গ্রেফতারের পর সাত বছরে শেষ হলো শীর্ষ এই যুদ্ধাপরাধীর মামলা।

২০১০ সালের ১৭ মার্চ ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক আলোচনা সভায় মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে দলের ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান তুলনা করেছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। মহানবীর সঙ্গে নিজামীকে তুলনা করার মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে এমন অভিযোগে ২১ মার্চ একটি মামলা করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। এ মামলায় ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১০ সালের ২৯ জুন সকালে নিজামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপর ওই দিন বিকাল পৌনে ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্রেফতার করা হয় নিজামীকে। ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি সেই অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগে নিজামীর বিচার শুরু হয় ওই বছরের ২৮ মে। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। পরে আসামিপক্ষের আবেদনে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক গ্রহণ শেষে একই বছরের ২০ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো এ মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখেন বিচারিক আদালত। এরই মধ্যে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে শূন্য পদে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল ২৬ ফেব্রুয়ারি জানান, এ মামলায় যুক্তিতর্ক শোনা হবে আবারও। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৃতীয়বারে মতো যুক্তিতর্ক শুরু হয় ১০ মার্চ থেকে। শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ রায় অপেক্ষমাণ রাখেন আদালত। ওই বছরের ২৩ জুন ট্রাইব্যুনাল জানান, রায় ঘোষণা হবে ২৪ জুন। তবে নিজামীর অসুস্থতার কারণে রায় ঘোষণা হয়নি সেদিন। ২০১৪ সালের ২৪ জুন থেকে রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয় আবার। পরে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর এ মামলার রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় নিজামীকে। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন তিনি। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হয় আপিলের শুনানি। শুনানি শেষ হয় ৮ ডিসেম্বর। গত ৬ জানুয়ারি ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয় ১৫ মার্চ। এরপর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২৯ মার্চ রিভিউ আবেদন করেন নিজামী। আবেদনের ওপরে ৩ মে শুনানি গ্রহণ করেন আদালত। রায় ঘোষণার দিন ধার্য হয় ৫ মে। ওই দিনের রায়ে রিভিউ আবেদন খারিজ করেন আদালত। ৮ মে রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয় নিজামীকে। ৯ মে বিকাল সাড়ে ৩টা, রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্ট। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা, ট্রাইব্যুনাল থেকে রায়ের কপি পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাত সাড়ে ৮টা, রায় পড়ে শোনানো হয় নিজামীকে। ১০ মে সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিট, কারাগারে নিজামীর সঙ্গে সাক্ষাতে যান পরিবারের সদস্যরা। রাতে ফাঁসিতে ঝুললেন নিজামী।

সর্বশেষ খবর