বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

জামায়াত কি নিষিদ্ধ হবে, না নতুন দল

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াত কি নিষিদ্ধ হবে, না নতুন দল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কি নিষিদ্ধ হবে? দলের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকরের পর এ আলোচনাই আসছে ঘুরেফিরে। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কঠিন এক সময় অতিক্রম করছে একাত্তরে বিতর্কিত এই রাজনৈতিক দলটি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষস্থানীয় সব নেতারই ফাঁসি হয়েছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন কারাগারে। এ মুহূর্তে সারা দেশে দলটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। নেতা-কর্মীরা নতুন করে সংগঠিত হবেন, নাকি একাত্তর আঁকড়ে থেকে রাজনীতি করবেন তাও আলোচনা হচ্ছে ভিতরে-বাইরে। তবে জামায়াতের বড় একটি অংশ নতুন করে রাজনীতির কথা ভাবলেও কঠিন নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়েছে। দলটির হাল ধরার মতো এখন আর কেউ নেই। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বশীল তরুণ নেতা আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আশা করি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার মতো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না।’ এর পরও রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে বিকল্প সব পথেই হাঁটছেন তারা। তিনি বলেন, ‘জামায়াত নিষিদ্ধ হলে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই এমন নেতাদের সামনে রেখে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণ, জনকল্যাণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদারনীতির নতুন দল গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের জাস্টিস একে পার্টির ইতিহাস সামনে রাখা হয়েছে।’ জানা যায়, দল নিয়ে নতুন করে ভাবছে জামায়াতে ইসলামী। দলের প্রথম সারির সব নেতা, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন, তাদের যুগের প্রায় অবসান। বিতর্কিত ভূমিকার কারণে দলের নিবন্ধন ইতিমধ্যে বাতিল হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবেও জামায়াত নিষিদ্ধের পথে। তাই দল নিয়ে নতুন করে ভাবছেন দায়িত্বশীলরা। এ অবস্থায় নতুন কোনো নামে বা আলাদা প্লাটফর্মে যাওয়ার কথা ভাবছে দলটির বর্তমান নেতৃত্ব। এ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলকে সামনে রেখে বিতর্কমুক্ত তরুণ মুখ সামনে আসছে। একইভাবে দলের নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শূরা পুনর্গঠিত হচ্ছে। শিগগিরই এসব পদে পরিবর্তন আসছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সূত্র বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে একের পর এক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফাঁসি বা আজীবন কারাদণ্ড এবং তাদের মুক্তির জন্য দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধসহ সহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারারুদ্ধ ও ফেরারি জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু আন্দোলন করে কোনো লাভ হচ্ছে না। এ অবস্থায় আর সহিংস হবে না জামায়াত। উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করা হবে। নতুনভাবে দলকে ঢেলে সাজানো হবে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড অবস্থায় মারা যান জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহার, কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী ও নায়েবে আমির আবদুস সুবহানকেও একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে রায়গুলো। এ ছাড়া দলের আরেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। নাশকতার মামলায় কারাগারে আছেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম পরওয়ার। অসুস্থতাজনিত কারণে মারা গেছেন নায়েবে আমির অধ্যাপক নাজির আহমাদ। দেশ ছেড়েছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ একাধিক মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থেকে দল চালাচ্ছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ, অধ্যাপক তাসনীম আলম, ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, মাওলানা আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ অন্য শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একের পর এক ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় ধর্মভিত্তিক এ রাজনৈতিক দলটি তাদের ইতিহাসে ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনবার এই দলটি নিষিদ্ধ হলেও নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের এমন সংকটকাল অতিক্রম করতে হয়নি কখনো।

সর্বশেষ খবর