বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জের সেই শিক্ষক বরখাস্ত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে কান ধরে উঠবোস করানো নারায়ণগঞ্জের সেই প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে এবার বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দাবিতে প্রতিবাদের মধ্যে উল্টো ওই শিক্ষকের চাকরি হারানোর খবর এলো। বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বরখাস্তের ওই চিঠি মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন বলে জানান শ্যামলকান্তি ভক্ত।

কারণ হিসেবে তার অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। শ্যামলকান্তি বলেন, ‘আমাকে লাঞ্ছিতের পর এবার চাকরিচ্যুত করা হলো। ওই দিনের ঘটনার পর থেকে আমি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এটাকে অনুপস্থিতি  দেখিয়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’ শুক্রবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে শ্যামলকান্তি ভক্তকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি উঠেছে। গতকাল সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কান ধরে দাঁড়িয়ে’ এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। ওই ঘটনায় পুলিশ কোনো ফৌজদারি অপরাধ না দেখলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি পেতে হবে। সকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘শিক্ষককে কান ধরে উঠবোস করানো, এটা আমার দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয়।... এটা কিন্তু একটা অপরাধ। যারা এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের নিশ্চয়ই শাস্তি ভোগ করতে হবে। কারণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যায় না। এটা আমরা কোনোভাবেই বরদাস্ত করতে পারি না।’ শিক্ষক শ্যামলকান্তিও এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দোষীদের শাস্তি চাই।’ তাকে বরখাস্তের চিঠির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বন্দর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয় : ‘আপনার (প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত) বিরুদ্ধে ছাত্রদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ গ্রহণ, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য ও বিদ্যালয়ে ছুটি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকা এবং প্রায়ই দেরি করে আসার অভিযোগ ম্যানেজিং কমিটির সভায় উত্থাপিত হয়।

পূর্বেও আপনার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং আপনাকে বহুবার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু আপনি এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত হননি। তাই ১৩ মে’র ম্যানেজিং কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

অর্থ গ্রহণের অভিযোগ সম্পর্কে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোবারক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। তবে তিনি কারও কোনো কথা শুনতেন না।

এদিকে ১৫ মে সভা করে দেশের বাইরে চলে যান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফারুকুল ইসলাম। তিনি কীভাবে ১৬ মে স্বাক্ষর করলেন এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মোবারক হোসেন।

সর্বশেষ খবর