বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাবি শিক্ষক কিলিং মিশনে অংশ নেয় চারজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার মিশনে অংশ নেয় চার জেএমবি সদস্য। ফেসবুকের মাধ্যমে তারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রাহাত নামের একজন তাদের সংগঠিত করেছিল। রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমনটাই জানিয়েছে গ্রেফতার জেএমবি সদস্য মাসকাওয়াথ হাসান ওরফে সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘ঘটনার দিন সকালে আমরা চারজন শালবাগান এলাকায় আসি। এরপর শিক্ষকের বাড়ির সামনে থেকে আমাদের দুজন পিছু নেয়। অধ্যাপক রেজাউল করিম এ সময় ওই দুজনকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কারা, এত সকালে এখানে!’ এর পরই জাবেদ তার কাছে থাকা চাপাতি দিয়ে অধ্যাপক রেজাউলের ঘাড়ে কোপ দেয়। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন জাবেদ বলে, ‘তুই দাঁড়িয়ে কী দেখছিস?’ তখন আমি আমার কাছে থাকা ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে আরেকটি কোপ দিয়ে অধ্যাপক রেজাউলের মৃত্যু নিশ্চিত করি। হাসান নামে আমাদের আরেক সঙ্গী মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। এরপর আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’’ আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আবদুল্লাহ আরও জানিয়েছেন, জাবেদ, হাসান ও রাহাত এই হত্যা মিশনে অংশ নিয়েছিল। তারা কখনো নিজেদের মধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে। আদালতে আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে জেএমবিতে যোগ দেন তিনি। জেএমবির ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের নাম না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাহাত আমাদের সংগঠিত করেছে।’ এদিকে গতকাল দুপুরে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছে, যে শনিবার এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, এর আগের শনিবার হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন সেটি ব্যর্থ হয়ে যায়। শনিবার অফিস ছুটি থাকে। লোকজনের চলাচল কম থাকার কারণে এ দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। জঙ্গিরা সবাই অধ্যাপক রেজাউলের চলাচল সম্পর্কে অবহিত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, ১৫ মে গভীর রাতে গাইবান্ধা থেকে মাসকাওয়াথ হাসান ওরফে সাকিব ওরফে আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত মোটরসাইকেল, চাপাতি ও একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যার পরিকল্পনা ও আশ্রয়দানকারী হিসেবে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ পর্যন্ত চারজনের মধ্যে হত্যায় মাসকাওয়াথ হাসান ওরফে সাকিব ওরফে আবদুল্লাহ সরাসরি জড়িত বলে জানান নগর পুলিশ কমিশনার।

 শিক্ষক আন্দোলন স্থগিত :  মন্ত্রীদের দেওয়া আশ্বাসে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার বিচার দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজম শান্তনু। ১৪ ও ১৫ মে মন্ত্রীরা এসে শিক্ষক হত্যার দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান। অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রীদের উদ্যোগ, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক রেজাউল করিমের খুনিদের শাস্তির দাবিতে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।’ তিনি জানান, দোষীদের শনাক্তকরণে ও শাস্তি বিধানে সরকারি দফতরসমূহের আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হলে শিক্ষক সমিতি আবার কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এদিকে ইংরেজি বিভাগও তাদের চলমান কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

সর্বশেষ খবর