শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৮ হাজার কোটি টাকার অডিট আপত্তি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রায় ২৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার ‘গোলমাল’ হয়েছে, যে অর্থ নিয়ে অডিট আপত্তি উঠেছে। এর মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে আপত্তিকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। আর ১৯ হাজার ৮১ কোটি টাকার অডিট আপত্তি উঠেছে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা এক প্রতিবেদনেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে, যে প্রতিবেদনটি সম্প্রতি জাতীয় সংসদের ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি’র কাছে পাঠানো হয়েছে। যে অর্থের গরমিল হয়েছে এর বেশির ভাগই ছোট ছোট হিসাবের মাধ্যমে। তবে ছোট ছোট ওই হিসাবই পুঞ্জীভূত হয়ে এখন মহীরূহে পরিণত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১ লাখ টাকা বা তার কম অর্থের বিপরীতে আপত্তি উঠেছে ৮৬টি, ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অডিট আপত্তির সংখ্যা ১৩৭টি, ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আপত্তির সংখ্যা ৯৮টি এবং ১৫ লাখ টাকার উপরে গরমিল হয়েছে এমন আপত্তির সংখ্যা ১৮১টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা প্রদান, ডরমেটরি ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পোশাক ধোলাই ভাতা প্রদান, পরিদর্শনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের টিএ/ডিএ প্রদান, প্রেরণা বোনাস, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, বেতন-ভাতা প্রদানকালে ব্যাংকের টাকায় রাজস্ব টিকিট ক্রয়, বিলম্বে অবস্থানজনিত যাতায়াত খরচ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকাল ভাতা প্রদান, ক্যাশ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হালকা নাশতা প্রদান, কর্মকর্তাদের আয়কর ব্যাংকের টাকায় পরিশোধ, বিশেষ ইনক্রিমেন্ট প্রদান, জিএম ও এজিএমদের ভ্যাহিকল অ্যালাউন্স প্রদান, গোষ্ঠীবীমা ও কল্যাণ তহবিলে অর্থ প্রদান না করা, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সুদ-সংক্রান্ত বকেয়া বোনাস প্রদান এবং টেলিফোন ও মোবাইল বিল প্রদানের মতো ছোট ছোট হিসাবের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ আপত্তি উঠেছে। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের মূল্য প্রত্যাবাসন, আমদানির বিপরীতে বিল অব অ্যান্ট্রি বকেয়া থাকা এবং ইনডেন্টিং কমিশনের অর্থ ফেরত আনা-সংক্রান্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে আপত্তিকৃত অর্থের একটি অংশ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আপত্তিকৃত অর্থের বেশির ভাগই নিষ্পত্তির মাধ্যমে অভিযুক্তদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। ১৯৭২ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৯ হাজার ৮১ কোটি টাকার বিপরীতে যে ৩ হাজার ১৯৬টি অডিট আপত্তি উঠেছিল, এর মধ্যে ২ হাজার ৩৭৮টি আপত্তি নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ৮১৮টি অডিট আপত্তির বিপরীতে এখনো ২ হাজার ২৯০ কোটি টাকা অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকার বিপরীতে যে ৫০২টি অডিট আপত্তি উঠেছে, এর মধ্যে ২৬টি অডিটের বিপরীতের মাত্র ৯৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। বাকি সব টাকাই এখনো অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০-১১ সময়ে ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ সময়ে ১ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ সময়ে ৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ সময়ে ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সময়ে ২০৮ কোটি টাকার বিপরীতে অডিট আপত্তি ওঠে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ ব্যয়ে এই অডিট আপত্তি নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছে জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটি। ১০ মে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করে অর্থ আদায়ের বিষয়ে যথাযথ তদারক হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন কমিটির সদস্যরা। কমিটির সদস্য আবদুর রউফ বলেন, কমিটি যত দ্রুত সম্ভব অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি করতে বলেছে। শিগগিরই মহাহিসাব-নিরীক্ষকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আর আপত্তির সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়-সংক্রান্ত আপত্তির বিষয়গুলো নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটর করে থাকে—উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের জিএম বদরুল হক খান বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়-সংক্রান্ত যে অর্থের বিপরীতে আপত্তি উঠেছে, সেগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক জড়িত। এরূপ আপত্তির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাববিবরণীতে প্রতিফলিত হয় না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থ প্রদানে যেসব আপত্তি উঠেছে, সে ব্যাপারে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদ ও গভর্নরের প্রদত্ত ক্ষমতাবলেই বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, বিধি-বিধান এবং নিয়মকানুনের আলোকে আপত্তিকৃত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর