শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেবে সরকার

তালিকা তৈরি করছে পুলিশ

রুহুল আমিন রাসেল

সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বা শীর্ষ ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করতে তালিকা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ জন্য বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ফরমে অনেক স্পর্শকাতর তথ্য চাওয়ায় ব্যবসায়ীরা পুলিশকে আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে একটি তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের পর সিদ্ধান্ত হবে, কোন ধরনের ব্যক্তিকে কেমন নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন বা দেওয়া হবে। এ জন্য সম্প্রতি ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সহসভাপতি মাহবুব আলমসহ সংগঠনটির ৫২ জন পরিচালকের কাছে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত  চেয়ে কয়েক পৃষ্ঠার একটি ফরম সরবরাহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই ধরনের ফরম সরবরাহ করা হয়েছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, রিহ্যাব, মেট্রোপলিটন চেম্বার, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট চেম্বারসহ সারাদেশের প্রভাবশালী বাণিজ্য সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সাবেক ও বর্তমান নেতাদের কাছেও।

ওই ফরমে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কবে ও কোথায় পড়াশোনা করেছেন? কোন সালে এসএসসি পাস করেছেন? জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর কত? করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর— টিআইএন কত? কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত আছেন কি না? থাকলে সেই রাজনৈতিক দলের নাম ও কোন পদে আছেন? কোনো মামলা আছে কি না, থাকলে মামলার সংখ্যা ও মামলার ধরন কী? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো শত্রু-মিত্র আছে কি না? শত্রু থাকলে তাদের নাম কি? বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা কি? অন্য কোনো ঠিকানা আছে কি না, ইত্যাদি প্রশ্নের তথ্য চাওয়া হয়েছে ওই ফরমে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহসভাপতি জসিম উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। ব্যবসায়ীরা সরকারের এই উদ্যোগে সব সময় আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সহায়তা করবে বলেও মনে করেন এই শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা। পুলিশের ওই ফরম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে এফবিসিসিআই পরিচালক ও গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ, সরকার দেশে যে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার অন্যতম অংশীদার আমাদের ব্যবসায়ী সমাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেন— এই সরকার ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব সরকার। তাই ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি এই উদ্যোগ হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানাচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। নিজ উদ্যোগেও এসব ব্যক্তি সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। পাশাপাশি সরকার তাদের নিরাপত্তামূলক সহায়তা দিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পরে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দেওয়া নির্দেশনায় জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসাবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় অযথা অবস্থানকারীদের ওপর নজরদারি করা হবে। সন্দেহ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হবে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জঙ্গিদের সম্ভাব্য টার্গেট কিলিং বন্ধের সুপারিশ করে বলা হয়, তথ্য সংগ্রহে সাইবার ইন্টেলিজেন্স গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি সচেতনতা ও সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে।

ওই প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, দেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে।

 

সর্বশেষ খবর