শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিলেটে আবার কামরান

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে আবার কামরান

সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কাউন্সিলর হিসেবে জনপ্রতিনিধির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর নির্বাচিত হন পৌর চেয়ারম্যান। ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা উন্নীত হয় সিটি করপোরেশনে। সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনেও নগরবাসী আস্থা রাখেন তার প্রতি। সিলেট সিটির প্রথম নগরপিতা হিসেবে অভিষিক্ত হন কামরান। ২০০৮ সালে সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনেও ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে কারারুদ্ধ কামরান পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। জনপ্রতিনিধিত্বের দীর্ঘ পথচলায় তিনি হয়ে ওঠেন গণমানুষের নেতা। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে উঠে আসা কামরানের সামনে ছিল হ্যাটট্রিক মেয়র হওয়ার হাতছানি। কিন্তু সেবার ঘটে ছন্দপতন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হার মানতে হয় তাকে। ভোটের হিসাবে পরাজিত হলেও মানুষের হৃদয়জয়ী কামরান এখনো নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন সিলেটবাসীর মাঝে। নগরভবন ঠিকানা না হলেও সিলেট মহানগরীর মানুষ এখনো তাকে ‘মেয়র সাব’ বলেই সম্বোধন করে। সুখে-দুঃখে, আপদে-বিপদে ছুটে যায় তার কাছে। কামরানও নিরাশ করেন না বিপদে পড়া তার প্রিয় নগরবাসীকে।

নির্বাচনে পরাজয়কে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান একটি অভিজ্ঞতা হিসেবেই নিয়েছেন। তার মতে, উত্থান-পতন না থাকলে জীবনকে উপলব্ধি করা যায় না। নির্বাচনে পরাজিত না হলে তার হয়তো জানাই হতো না ক্ষমতাহীন কামরানকে নগরবাসী কতটুকু ভালোবাসে। সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে জনতার মেয়র হয়ে ওঠা কামরানের এখন সকাল-সন্ধ্যা কাটে সাধারণ মানুষকে নিয়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাসার নিচতলার ড্রইংরুমে দেখতে পান অপেক্ষমাণ মানুষের জটলা। কেউ এসেছেন সমস্যা নিয়ে, আবার কেউ বিচারপ্রার্থী হতে। কামরান সবার কথা শোনেন, সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন— কিছুতেই বাদ পড়ছেন না কামরান। তাকে ছাড়া যেন নগরবাসীর কোনো অনুষ্ঠানই পূর্ণতা পায় না। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শেষে মধ্যরাতে যখন কামরান ফেরেন তখনো মানুষের আনাগোনা থাকে নগরীর ছড়ারপাড়াস্থ বাসায়। কয়েক দিন আগে সিলেট নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ দখল নিয়ে দলিল লেখক ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে, মামলা করে। এ নিয়ে দলিল লেখক ও হকারদের মাঝে কয়েক দিন ধরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি চলে আসছে। উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় পক্ষের মধ্যে। এ বিষয়টিও সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন কামরান। তার হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শাস্তিপূর্ণ অবস্থানের।

এদিকে, নগরভবনের ভারমুক্ত হওয়ার পর কামরান নিজেকে শতভাগ সঁপে দিয়েছেন রাজনীতিতে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগজুড়ে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কামরানকে পেয়ে নেতা-কর্মীরাও উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন, ফলে অনেক ইউনিয়নে তার প্রচারণা ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। কামরান মনে করেন, মানুষের ভালোবাসার জন্যই তিনি পৌরসভার একজন সাধারণ কমিশনার থেকে নগরপিতার আসনে বসতে পেরেছিলেন। এ ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন মেনে নিয়ে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান মানুষের কল্যাণে, দলের কল্যাণে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর