বন্দরের পিয়ার সাত্তার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন ‘সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’র নামে আয়োজিত মুসল্লি সমাবেশের বক্তারা। শাস্তিবিধানের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সমাবেশের সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, তাদের দাবি মানা না হলে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কথায় রাস্তায় নামিনি। আমরা আল্লাহর পক্ষে নেমেছি।’ গতকাল জুমার নামাজের পর ডিআইটি মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তৃতা করেন তাহরিকে নবুয়াত বাংলাদেশের আহ্বায়ক ড. সৈয়দ এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, মহানগর হেফাজতের আহ্বায়ক মাওলানা ফেরদৌস, মুফতি আবুল হাসেম, মাওলানা আবদুল কাদির, ওলামা পরিষদের নেতা মুফতি হারুনুর রশিদ, মুফতি দেলোয়ার হুসাইন, মাওলানা দ্বীন ইসলাম, মুফতি আনিছুর রহমান, মুফতি মো. সীরাজুল ইসলাম, মুফতি ইসমাইল মোহাম্মদ সিরাজী, মাওলানা আবদুল লতিফ প্রমুখ। ডিআইটি মসজিদ এলাকা ছাড়াও বন্দর প্রেসক্লাবের সামনে এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লায় শিক্ষক শ্যামলের শাস্তি দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। ডিআইটি মসজিদের সামনের সমাবেশে ২০ হাজার মুসল্লি অংশ নেয়। আয়োজকরা জানান, তুমুল বৃষ্টির কারণে অনেকে সমাবেশে আসতে পারেননি। এ সমাবেশে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘আল্লাহওয়ালা’ বলে অভিহিত করে বলেন, তার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও দলের নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ কী কারনে আল্লাহ ও রসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তিকারী শিক্ষক শ্যামলের পক্ষ নিয়েছেন তা খুঁজে দেখতে হবে। আইনমন্ত্রীও শ্যামলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। এ তিনজনকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। মাওলানা আবদুল আউয়াল তার বক্তৃতায় সাংবাদিকদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, সত্যকে লুকাবেন না। মিথ্যা প্রচার করলে আপনারা বাঁচতে পারবেন না। তিনি বলেন, অনেক পত্রিকায় নাস্তিক শ্যামলের পক্ষে লেখালেখি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এভাবে চললে গোটা দেশে আগুন জ্বলবে। সমাবেশে বক্তারা আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষকারীর সাহায্যকারীদের দালাল আখ্যা দিয়ে তাদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলেন, মানুষের মধ্যে ধর্মবিরোধ সৃষ্টির জন্য দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্র একযোগে কাজ করছে। বক্তারা সেলিম ওসমান এমপির ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, একজন নাস্তিককে শাস্তি দিয়ে এই এমপি সহি বিচার করেছেন। সেলিম এমপির উদ্দেশে এক বক্তা বলেন, ‘নাস্তিককে শাস্তি দেওয়ায় বামপন্থি দল ও সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা আপনার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বাংলার মুসলমানরা বেঁচে থাকতে তা সফল হবে না।’ সরকারের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে থামান। নইলে, তারা যেভাবে নাস্তিকের পক্ষে কথা বলছে এর প্রতিক্রিয়ায় মুসলমানরা একাট্টা হয়ে দেশ অচল করে দেবে। ‘শ্যামলের প্রহারের শিকার’ বলে কথিত পিয়ার সাত্তার হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী রিফাত হোসেন সমাবেশে বলেছে, ‘শ্যামল স্যার আমাকে মারতে মারতে আল্লাহকে কটাক্ষ করেছেন। আমি তার বিচার চাই।’
শ্যামলকে ঢাকায় প্রেরণ : উন্নত চিকিৎসার জন্য শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে গতকাল কড়া পাহারায় নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিন দিন আগে তাকে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শ্যামলের স্ত্রী সবিতা রানীর আবেদনে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।