প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দেশে বিদ্যমান আইনশিক্ষার সিলেবাস ত্রুটিপূর্ণ। সার্টিফিকেট বেচাকেনা হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। বার কাউন্সিলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সরকারের সঙ্গে কথা বলুন। ল’ শিক্ষার সিলেবাস আপনারা ঠিক করুন।’ গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে নৈশভোজে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি। বার কাউন্সিলের ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিচারকদের সম্মানে এ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
এস কে সিনহা বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সাংঘাতিক নিচে নেমে গেছে। পিলখানা থেকে মোহাম্মদপুর পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। ভবনের নিচে লন্ড্রি আর ওপরে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাইনবোর্ড। বিষয়টা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। থানা লেভেল পর্যন্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’ পড়ানো হয়। সার্টিফিকেট বেচাকেনা হয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বায়নের যুগে প্রতিটি দেশে মেডিকেল সায়েন্সের মতো আইনের ব্রাঞ্চ হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের ল’-তে অনেক বেসিক জিনিস পড়ানো হয় না। তিনি বলেন, ‘‘আইন হচ্ছে একটি বিজ্ঞান। এটি নিয়মিত ডেভেলপ করতে হবে। আমেরিকার বেস্ট স্টুডেন্টরা ল’-তে পড়ে। জাপানেও টাফ সাবজেক্ট ল’। ভারতেও বেস্ট স্টুডেন্টরা ল’ পড়ে। আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে পাস করে ল’ পড়তে আসে। তারা ইংরেজি পড়তে পারে না। এসব বিষয়ে সমাধানের জন্য বার কাউন্সিলকে উদ্যোগ নিতে হবে।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ভারতে আইন নিয়ে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আমাদের দেশে একটিও নাই। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা কেন পারব না। প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব।’ তিনি বলেন, বার কাউন্সিলের যে মূল ভবন সেটি অনেক ছোট। বর্তমানে সারা দেশে ৫০ হাজার আইনজীবী রয়েছেন। ১০ বছর পর এর সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষাধিক। বার কাউন্সিলের বড় ভবন তৈরি করতে হবে। আইনজীবীদের যথেষ্ট ট্রেনিং দরকার। একটা থেকে দুইটা প্রশ্ন করলে আইনজীবীরা উত্তর দিতে পারেন না।’
নৈশভোজের আয়োজন করেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী বাসেত মজুমদার। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ আহমদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সেক্রেটারি শ ম রেজাউল করিম।