রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা উৎকণ্ঠায় পশ্চিমারা

আধুনিক অস্ত্র আনার অনুমতি চেয়েছে মার্কিন দূতাবাস

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

নিরাপত্তা উৎকণ্ঠায় পশ্চিমারা

হঠাত্ করেই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানরত পশ্চিমা কূটনীতিকরা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইইউসহ ১৭ বিদেশি মিশনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা বাড়াতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সফর করছেন দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র বহনের অনুমতি দেয়ার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কা না থাকলেও বিদেশিদের শঙ্কা দূর করতে কয়েক দিন আগেই বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। সর্বশেষ মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মী জুলহাজ মান্নান উগ্রবাদীদের হাতে নিজ বাড়িতে বন্ধুসহ খুন হওয়ার পর পশ্চিমাদের উদ্বেগ বেড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। অবশ্য পশ্চিমা বেশির ভাগ কূটনীতিক বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের কাছে জানতেও চেয়েছেন। তাদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জানা যায়, গুলশান, বনানী ও বারিধারার কূটনৈতিক জোনে থাকা পশ্চিমা ১৭ দেশের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র দফতরে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশের কূটনৈতিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিভাগে লোকবল বাড়ানো হয়। গুলশান, বারিধারায় পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দার সংখ্যাও বাড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশ দেওয়া হয় উপর্যুপরি দৃশ্যমান টহলের। একযোগে পশ্চিমাদের এ ধরনের চিঠি পাওয়ার পর পুরো পরিস্থিতি সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো সম্পর্কেও জানানো হয় মিশনগুলোকে। আশ্বস্ত করা হয়, যে কোনো ধরনের সহযোগিতার। এরই মধ্যে বুধবার ঢাকা আসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ব্যুরো অব ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটির সহকারী মন্ত্রী গ্রেগরি বি স্টার। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিক, কর্মকর্তা ও সব কর্মচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা জানেন। স্বরাষ্ট্র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খানের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন, মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য আধুনিক অস্ত্র আমদানি করা প্রয়োজন। দূতাবাস, কূটনীতিক ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্যই এটি প্রয়োজন। অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে এখন দূতাবাসের নিজস্ব নিরাপত্তাবাহিনীর অস্ত্রের প্রয়োজন হবে না বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগের দিন পুলিশের মহাপরিদর্শকের দফতরে গিয়েও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে জানতে চান মার্কিন এই প্রতিনিধি। আর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ঢাকায় তাদের দূতাবাস, কূটনীতিক ও মিশনের দেশি-বিদেশি কর্মকর্তাদের বাসায় ও চলাফেরায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। সব বৈঠকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অবশ্য গ্রেগরি বি স্টারের আগে সম্প্রতি পরপর ঢাকা সফরে আসা সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এবং মুখ্য উপসহকারী মন্ত্রী উইলিয়াম-ই টডও বাংলাদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পাশাপাশি দূতাবাসের কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছেন। সূত্রমতে, শুধু মার্কিন দূতাবাসই নয়, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানানো ইইউ, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো অন্য মিশনগুলোকেও আশ্বস্ত করেছে সরকার। বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি তাদের আশ্বস্ত রাখতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের আগে জানতে চাওয়া পশ্চিমা কূটনীতিকদের অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশের বাইরে থেকে ফেরার পর আগামী সপ্তাহে একাধিক দফায় আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক ব্রিফিং আয়োজন করে পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য জানানো হবে।

সর্বশেষ খবর