রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

কূলকিনারা হয়নি কুষ্টিয়া খুনের আইএসের দায় স্বীকার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কূলকিনারা হয়নি কুষ্টিয়া খুনের আইএসের দায় স্বীকার

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল শিশির মাঠে হোমিও চিকিত্সক মীর সানাউর রহমান খুনের ঘটনার কোনো কূলকিনারা হয়নি। তবে এরই মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্স। তাদের দাবি, আইএসের গণমাধ্যম ‘আমাক’ জানায়, কুষ্টিয়ায় খ্রিস্টধর্মীয় ভাবধারার সমর্থনে কাজ করায় আইএসের যোদ্ধারা ওই চিকিত্সককে হত্যা করেছে। অন্যদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। সানাউর রহমানের সেজ ভাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মীর আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল বিকালে মডেল থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ২২। এজাহারে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হোমিও চিকিত্সক সানাউর এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুজ্জামান সাপ্তাহিক দাতব্য চিকিত্সা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বটতৈল শিশির মাঠ নামক স্থানে গেলে দুর্বৃত্তের চাপাতির আঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সানাউর। গুরুতর আহত ড. সাইফুজ্জামানকে কুষ্টিয়া থেকে ওই দিনই রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করা হয়। জানা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে কুষ্টিয়া পৌর কবরস্থানে মীর সানাউরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন সাইফুজ্জামানের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, তার মাথার আঘাত গুরুতর। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার লাগবে। কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মীর সানাউরের দাফন হয়েছে। হত্যায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে।

নিহত সানাউরের ভাই মীর আনিসুর রহমান জানান, ‘বিকালে মডেল থানায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছি। পরিবারের সবাই চায় আমার ভাইয়ের আসল খুনি ধরা পড়ুক।’ আইএসের দায় স্বীকারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও র্যাব তদন্ত করে দেখুক কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আমার ভাইয়ের কোনো শত্রু ছিল বলে আমাদের জানা নেই। তিনি ফ্রি হোমিও চিকিত্সা দিতেন।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে আনিসুর রহমান বলেন, ‘একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব খুনি শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শুক্রবার সানাউর রহমানের দুই সহকারীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে তাদের কাছ থেকে তেমন কিছু তথ্য আদায় করতে পারেনি। গতকাল বিকালে মীর সানাউর রহমানের নিজ এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে। শহরের সাদ্দাম বাজার মোড় এলাকায় এ মানববন্ধনে শত শত মানুষ অংশ নেয়। মহিলা ও শিশুরাও হত্যার প্রতিবাদ জানাতে আসে। পরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম এ মুহিদ, প্রফেসর আহসান উল্লাহ ফয়সাল, বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. বাকি বিল্লাহ বিকুল, কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান মন্টু, বাসদের সমন্বয়ক সফিউর রহমান শফি প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘সানাউর রহমান ছিলেন একজন সমাজসেবী। তিনি মানুষের সেবা করতেন। এলাকার মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতেন। তার মতো একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা হতে পারে, তা ভাবাও যায় না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হোক।’

সর্বশেষ খবর