রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সরকারকে কঠোর হতেই হবে

শিক্ষক লাঞ্ছনা নিয়ে বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া

আকতারুজ্জামান রুনকি

দেশের সুখ্যাত শিক্ষাবিদরা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনা ও অবমাননার বিষয়ে সরকারকে কঠোর হতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, লাঞ্ছনার শাস্তি নিশ্চিতকরণ আর শিক্ষকের নিরাপত্তা— গুরুত্বপূর্ণ এ দুটো বিষয়েই সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ভুক্তভোগী শিক্ষক যাতে স্কুলটিতে ভালোভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখতে পারেন এ ব্যাপারেও সরকারকে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ, স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সাহায্য- সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষক শ্যামলকান্তি তার শিক্ষকতা জীবন চালিয়ে যেতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, সরকার এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী স্কুলের গভর্নিং বডি বাতিল করে দিয়েছেন। শুরু করা হয়েছে তদন্ত। এ জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য। এখন নিশ্চয়ই তদন্ত শেষে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষককে স্বপদে বহাল করে সঠিক কাজই করেছে সরকার। এখন যে বিষয়টি দরকার তা হলো রহস্যের উন্মোচন ঘটানো। কারণ, সারা দেশের মানুষ শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। দেশজুড়ে মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এদেশের মানুষ শিক্ষক ও শিক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। এটি আশার দিক। তিনি বলেন, শিক্ষকের ওপর সাম্প্রদায়িকতার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক। কারণ ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য রটিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারের তদন্ত কমিটিতে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার প্রমাণ মেলেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষক আরও দাবি করেন, যে শিক্ষক ১৮ বছর ধরে বিদ্যালয়টি আগলে রেখেছেন গভর্নিং বডি তার বিচারের অধিকার রাখে না। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইতে পারে। বিচারের জন্য দেশে আইন রয়েছে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক শ্যামলকান্তির পাশে শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা দাঁড়িয়েছেন। এ জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি ঘটনার সংশ্লিষ্ট এমপি তার সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি বলেন, এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এ ব্যাপারে অবশ্যই এই এমপির সঙ্গে সরকারের কথা বলতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তদন্ত কমিটির যে ফলাফল পেয়েছেন তাতে এ অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। মন্জুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের আরেকটি বিষয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে ‘সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’র ব্যানারে শিক্ষক শ্যামলকান্তির শাস্তি দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তাকে হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। কারণ, এতে প্রধান শিক্ষকটির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারের এক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা উচিত। এ ছাড়া তদন্তে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার বিষয়টিও প্রমাণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষক শ্যামলকান্তির শিক্ষকতা করতে হলে স্থানীয় সমর্থন পাওয়া জরুরি। তাই এ ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। এ ছাড়া এই শিক্ষকের পাশে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য বিচক্ষণ ও শিক্ষানুরাগী একটি গভর্নিং কমিটি স্কুলটিতে থাকতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর