শিরোনাম
রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা
কলকাতার চিঠি

বামফ্রন্টের ভরাডুবি যে কারণে

সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

বামফ্রন্টের ভরাডুবি যে কারণে

পশ্চিমবঙ্গ নামক অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের ভরাডুবির যে কারণগুলো আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তার প্রথম দিকেই রয়েছে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। মমতা ও মোদির মধ্যে যে সমঝোতা হয়ে গেছে বামফ্রন্ট তা ধরতেই পারেনি। দীর্ঘ শাসনক্ষমতা ভোগ করার পর ২০১১ সালে পরাজয়ের স্বাদ পায় বামফ্রন্ট। তারপর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার প্রতিটিতেই একটু একটু করে ক্ষয় হয়েছে বাম ভোটের। এতদিন যারা বাম শিবিরে নানা মতলবে ঘুরে বেড়াত তারাই মানে মানে সরে পড়েছে। আর এ সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ফলেই কংগ্রেসের সঙ্গে তৈরি করা জোটটা তারা তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে পারেনি। বামেরা এবার ভোটারদের মন বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে জোট নিয়ে কোন লাইনে প্রচার করতে হবে, সে ব্যাপারেও তারা যথেষ্ট সন্দিহান ছিল। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর যে এ জোট নিয়ে আপত্তি রয়েছে তা তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন। অন্যদিকে কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদের নেতা অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও বারে বারে বিরোধ বাধে বাম শরিকদের। ফলে সাধারণ মানুষ তো বটেই, ট্র্যাডিশনাল বাম ভোটাররও বুঝতে পারছিলেন না জোটের ভবিষ্যত্ কী হবে। বামফ্রন্টের নিজস্ব ভোট খুব একটা কমেনি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের তুলনায় তা কমেছে মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু আসনের নিরিখে তাদের কপালে শিকে ছিঁড়েনি। এর আরেকটা কারণ, টাকাও বটে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপি যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছে তার ধারেকাছে যেতে পারেনি বাম দলগুলো। পিছিয়ে পড়েছে প্রচারযুদ্ধেও। ২ টাকা কিলো দরের চাল আর গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের যে কথা বলে গোটা বাংলায় তৃণমূল প্রচার চালিয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেনি বাম দলগুলো। এ ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী একশ্রেণির মানুষও এ নির্বাচনে মমতাকে সাহায্য করেছেন।

এ ছাড়া বাম আন্দোলনের ‘হত্যাকারী’ প্রকাশ কারাত ইউপিএ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে বাম দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছিলেন। পতনের সেই শুরু। যে বিষয়টা এবার মেরামত করার চেষ্টা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান নেতারা। কিন্তু বিমান বসুর মতো নেতারা, যারা মান্ধাতার বাবার আমলের চিন্তাধারা নিয়ে পড়ে থাকতে পছন্দ করেন তাদের অসহযোগিতাও বামেদের এ ফলের একটা বড় কারণ। রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এখনই এ ধরনের নেতাদের সাইডলাইনে না পাঠালে বামফ্রন্টের জনবিচ্ছিন্নতা আরও বাড়তেই থাকবে। এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নরেন্দ্র মোদির মধ্যে যে সমঝোতা হয়ে গেছে, সে বিষয়টি ধরতেই পারেননি বাম নেতারা। ফলে কোনো রাজনৈতিক ইস্যুর ওপর জোর না দিয়ে গণতন্ত্র বাঁচাও বলে ভোট চাইতে গেলেন। সেখানেও পেরে উঠলেন না ২ টাকা কিলো চালের সঙ্গে।

সর্বশেষ খবর