সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্বৃত্তের হাতে অস্ত্রের লাইসেন্স

—ড. তোফায়েল আহমেদ

দুর্বৃত্তের হাতে অস্ত্রের লাইসেন্স

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনে সহিংসতা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এটা সব সময়ই কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। তবে সহিংসতার মাত্রাটা কেমন সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একক কারণে সহিংসতার মাত্রা বেশি হচ্ছে না। বহুমাত্রিক কারণেই সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে সমাজের সার্বিক অবস্থা এবং কিছু মানুষের নেতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং আধিপত্য বিস্তারের কুযোগ্যবাসনা। আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি। নির্বাচন কমিশনের নির্বিকার অদক্ষতা-অবহেলা। সর্বোপরি সরকারের নীল নকশা। সব মিলিয়ে এত বেশি সহিংসতা ও প্রাণহানি ঘটছে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল যা করছে, সেগুলো না করলেও পারত। এমনিতেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা জয়লাভ করতে পারত। তিনি বলেন, সরকারি দলের ভিতরে নমিনেশন প্রক্রিয়াটা সঠিক না হওয়ায় এবং যোগ্য লোক নমিনেশন না পাওয়ায় সংকটটা এখন বেশি। যারা নমিনেশন পাচ্ছেন না তারা মাঠ কিন্তু ফাঁকা ছাড়ছেন না। অন্যদিকে যারা প্রভাবশালী তারাও রয়েছেন বিরোধী পক্ষকে দমন করার নীতিতে। যে কারণে পেশিশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। অন্যদিকে বেশ কিছু জায়গায় দেখা গেছে, গোলাগুলি হচ্ছে লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে। তার মানে দুর্বৃত্তের হাতে এখন অস্ত্রের লাইসেন্স চলে গেছে। ড. তোফায়েল বলেন, আরেকটি বিষয় যা কোথাও আলোচনা হচ্ছে না— সেটা হলো, গণতন্ত্র এবং নির্বাচন এটা মানুষের জীবনের চেয়ে বেশি নয়। প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ভোটের পর যখন দেখা গেল, নির্বাচনী সহিংসতায় এত মানুষের জীবন যাচ্ছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে— এটা নিয়ে সবাই নির্বিকার। কেউ কোনো কথা বলছেন না। এ রকম অবস্থায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল নির্বাচন বন্ধ করে কীভাবে মানুষের জীবন রক্ষা করা যায় সে জন্য একটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা। তারপর নির্বাচন শুরু করা। কিন্তু তা করা হয়নি। এখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন আর কোনো দায়দায়িত্ব বহন করছে না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা সন্ত্রাসের রেকর্ডকে মেনে নিচ্ছি। মৃত্যুকে উপহাস করছি। গ্রাম-গঞ্জে যে গরিব মানুষগুলো মারা যাচ্ছে সেগুলো দেখছি না। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন— এত মৃত্যু, এত অস্ত্র, এত ধ্বংস দিয়ে ‘গণতন্ত্র’ কী করব? এ গণতন্ত্র ও নির্বাচন অর্থহীন।

সর্বশেষ খবর