আবারও পেছাল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের জাতীয় কাউন্সিল। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর কাউন্সিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এর আগে ১০ ও ১১ জুলাই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এ জাতীয় সম্মেলনে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকটি পদ বাড়ানো হতে পারে। তবে কমিটির আকার বাড়ানোর বিষয়ে সায় মেলেনি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গতকাল গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সম্মেলন প্রস্তুতির উপকমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর তিন মাস বাড়িয়ে এ বছরের ৯ জানুয়ারি দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে কাউন্সিলের জন্য ২৮ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ১০ ও ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে। দলীয় সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পর সম্মেলন প্রস্তুতি বিষয়ক বিভিন্ন উপকমিটির নেতারা তাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। বৈঠকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুর রহমান প্রমুখ ঈদুল ফিতর, বর্তমান বৈরী আবহাওয়া, ঈদের ছুটি, বর্ষাকাল প্রভৃতি কারণ দেখিয়ে সম্মেলনের তারিখ পেছানোর প্রস্তাব করেন। সভার সভাপতি শেখ হাসিনা তাতে সায় দেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে ২২ ও ২৩ অক্টোবর সম্মেলনের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বৈঠকে কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পিরোজপুর, বরিশাল, খুলনা, নড়াইলসহ সাতটি জেলা কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় গঠনতন্ত্র উপপরিষদের আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক তার রিপোর্টে প্রস্তাব করেন, দলের জন্য একটি সময়োপযোগী ও আধুনিক গঠনতন্ত্র প্রয়োজন। তিনি সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক পদের সংখ্যা বাড়ানো এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক সৃষ্টির প্রস্তাব করেন। কিন্তু শেখ হাসিনা কমিটির পরিসর বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এ সময় দলীয় সভাপতি ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের পদ বাড়ানোর কথা বলেন। ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগ হলে সেখানেও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সৃষ্টির কথা বলেন। বাকি প্রস্তাবগুলোর আরও বিষদ পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপির মতো অনেক বড় আকারে কমিটি করব কিন্তু মিটিং করব না এমন কমিটির দরকার নেই। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকও রয়েছেই। এর মধ্যেই সব এসে যায়। আলাদা পদের দরকার নেই। স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো দলের পক্ষ থেকে এটি দেখছিই। আবার আলাদা পদ সৃষ্টি হলেই ঝামেলা বাড়বে। তবে প্রশিক্ষণ সম্পাদকের পদ বাড়ানোর দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সম্মেলন প্রস্তুতির সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সদস্য সচিব মির্জা আজম কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য নৌকার আদলে মূল মঞ্চের নকশা অনুমোদন করিয়ে নেন।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে ঘোষণাপত্র যুগোপযোগী করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ঘোষণাপত্রে রূপকল্প-২০৪১ এর বিষদ ব্যাখ্যা সংযোজনের পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, রাষ্ট্রের রূপ কী হবে, জনগণের জীবনযাত্রার মান কেমন হবে, মাথাপিছু আয় কত হবে, এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরতে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি একই সঙ্গে সরকারের অর্জনগুলোও ঘোষণাপত্রে সংযোজনের কথা বলেন। এসব কাজ নিপুণভাবে সম্পন্ন করতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণাপত্র পরিমার্জনের কাজ শেষ করতে বলেন। বৈঠকে এইচটি ইমাম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আকতারুজ্জামান, ড. আবদুর রাজ্জাক, হাছান মাহমুদ, ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।