বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাত ১২টার আগেই সবাইকে হত্যা, গলা কাটা হয় ১৮ জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত ১২টার আগেই সবাইকে হত্যা, গলা কাটা হয় ১৮ জনের

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা জিম্মি ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। এদের প্রত্যেকের গলা কাটা ছিল। বাকি দুজনের মৃত্যু হয় ভারী কোনো বস্তুর আঘাতে। এদের কেউই রাত ১২টার পর বেঁচে ছিলেন না। এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। এদিকে গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার তিনজনের পরিবার এখন লাপাত্তা। তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের সবার শরীরে কোপের চিহ্ন আছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক অবন্তি কবিরসহ আরও এক জিম্মির মৃত্যু হয় ভারী অস্ত্রের আঘাতে। নিহত অবন্তি কবিরসহ মোট দুজন ছাড়া বাকি সবার গলা কাটা ছিল। তাদের দুজনের গলা কাটা হয়নি। ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে গুলশান হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন এই চিকিৎসক। ঢামেকের তৃতীয় তলায় নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘গুলশান থানা পুলিশের নির্দেশে হামলায় নিহত ২৬ জনের ময়নাতদন্ত করি সিএমএইচে। এর মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি রয়েছে।’ সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ পরীক্ষা করে আমরা ধারণা করছি, রাত ১২টার পর তারা কেউ আর বেঁচে ছিলেন না।’ পাঁচ জঙ্গির ময়নাতদন্তের বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘নিহত জঙ্গিদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তিনজনের শরীর বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের হাতের কিছু অংশ, অন্যজনের হাত বিচ্ছিন্ন এবং আরেকজনের শরীরের একপাশ থেঁতলে গেছে।’ ডা. সোহেল বলেন, সবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত জিম্মি নারীদের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট করা হয়েছে কি না এ জন্য হাই ভ্যাজিনাল সোয়াব সংগ্রহ করেছি। হামলার আগে নিহত জঙ্গিরা শক্তিবর্ধক কোনো ড্রাগ সেবন করেছিল কি না তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’ এদের ভিসেরা সংরক্ষণের উপাদান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ডা. সোহেল মাহমুদ। গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার তিনজনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ইব্রাহিম হাসান খান ও জুনায়েদ খানের বাসা ভাটারা এলাকায়। আর আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোয়েন্দারা এই তিন পরিবারের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না। সূত্র জানায়, ভাটারা ও পান্থপথের দুই বাসায় গিয়ে পরিবারগুলোর কাউকে পায়নি গোয়েন্দারা। তারা আত্মগোপনে আছেন বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। নিখোঁজ আশরাফের বাসা পান্থপথের একটি বহুতল ভবনের এক ফ্ল্যাটে। তবে কেউ বাসায় নেই। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, আশরাফ প্রায় এক বছর এ বাড়িতে আসেন না। তবে তার বাবা-মা ও বোন থাকতেন। ঈদের আগে তারাও ‘দেশের বাইরে’ চলে গেছেন। অন্যদিকে ভাটারা এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই ইব্রাহিম ও জুনায়েদের পরিবার বছর খানেক ধরে বিদেশে বলে স্থানীয়রা পুলিশকে জানিয়েছেন। এদিকে আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। আলোচিত এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। তিনি মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, উল্লেখ করার মতো কিছু না থাকলেও তদন্তকাজ দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে কয়েক রকমের আলামত সংগ্রহ করে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

এদিকে গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার তিনজনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

১ জুলাই রাতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার তিন দিন পর গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক রিপন কুমার বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে এ মামলাটি করেন। নিহত পাঁচ জঙ্গির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫ জনসহ এ মামলায় মোট ২০ জনকে আসামি করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।

সর্বশেষ খবর