বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আশ্বস্ত হতে পারছে না বিদেশিরা

বিজিবি চায় ভারত অস্ত্র অনুমোদনের তাগাদা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

হামলার শিকার হওয়া আর্টিজান রেস্টুরেন্টের ৭৯ নম্বর সড়কের কয়েকশ গজ দূরে অবস্থিত একটি পশ্চিমা দূতাবাসের গতকালের বিকাল। মিশন প্রধানের আমন্ত্রণে সেখানে যাওয়া। প্রাথমিক তিন স্তরের নিরাপত্তা চেকিং পেরিয়ে মূল ভবনে প্রবেশের পর আরেক দফায় চেকিং। এই স্তর পার হওয়ার পরও দেখা নেই কারও। কাউকে চলাফেরা করতেও দেখা গেল না। আগে এই স্থানটিতে এলেই দূতাবাসটির মধ্যম সারির কূটনীতিক ও কর্মীদের পরস্পরের মধ্যে বলা কথাগুলো কানে আসত। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি নেই। ঢাকায় যে দেশগুলোর পক্ষ থেকে সবার আগে হামলার আশঙ্কা করা হয়েছিল, তার একটি এই দেশ। পরে মিশন প্রধানের কক্ষে এ প্রতিবেদকের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান সেখানকার তিন কূটনীতিক ও কর্মকর্তা। জানালেন, মিশনের অর্ধেক কর্মীকে ছুটি দিয়ে দেশে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের দিয়েই চালানো হচ্ছে কাজ। গতকাল একাধিক দূতাবাসের কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাপক পুলিশি টহল ও পুরো কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরও নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না ঢাকায় অবস্থান করা বিদেশিরা। এ কারণে অফিসের বাইরে কোনো কাজ না করতে নিজ নিজ নাগরিকদের বার বার অনুরোধ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন দূতাবাসের পক্ষ থেকে। আর মিশনগুলোর নিরাপত্তার জন্য একাধিক দূতাবাসের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছে অস্ত্রের লাইসেন্স, কেউ কেউ চেয়েছেন বিশেষায়িত বাহিনী। পশ্চিমা এক কূটনীতিকের মন্তব্য, ‘কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই আসলে নিশ্ছিদ্র নয়। যার প্রমাণ উত্তর গুলশানের সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে সর্বশেষ হামলা। এরপর নতুন ব্যবস্থাতেই ফাঁক থাকবে না, তা বলা যায় না।’ জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান দূতাবাস তাদের বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি চেয়েছে। অনুমতি চেয়ে পাঠানো চিঠিতে জাপান দূতাবাস উল্লেখ করেছে, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে জাপানের নাগরিকদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদনও জরুরি। একই ধরনের আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বেশ আগেই। যুক্তরাষ্ট্র আবেদন করেছে তাদের সাবেক কর্মী জুলহাস মান্নান নিহত হওয়ার পরপরই। আর ভারতের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য তাদের মিশনে বিজিবি মোতায়েনের। নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরালিয়ন, নরওয়ে, সুইডেন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড দূতাবাস ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন সংস্থার অফিস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকরা বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা বলেছেন। তাদের প্রত্যেকের উদ্বেগ ও আতঙ্ক কমিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর গুলশান হামলার পর কূটনৈতিক জোনসহ বিদেশিরা রয়েছেন এমন এলাকার নিরাপত্তাকে এখন সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। যারা আবেদন করেছেন তাদের চাহিদামতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে সব আবেদন, নোট ভারবাল ও চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং সেগুলো নিয়মিত ফলোআপও করা হচ্ছে। অবশ্য সরকার কারও আবেদনের জন্য বসে নেই, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর