শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
সম্মেলন শেষ, জঙ্গি মোকাবিলায় গুরুত্ব

ডিসিদের ২৮৮ প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে  জনসচেতনতা বাড়ানোর বড় বার্তা দেওয়া হলো জেলা প্রশাসকদের। ২৬ জুলাই শুরু হওয়া ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরা ৩৯টি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৩৩৬টি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত এসব প্রস্তাবের বাইরে ১৮টি কার্যঅধিবেশনে আরও ২৮৮টি প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। চার দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল সচিবালয়ে সমাপনী অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।  লিখিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয় গুলশান-শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এবারের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মেসেজ তো অনেকগুলো। একটা বড় মেসেজ হলো জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সমস্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসকে মোকাবিলা করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ডিসিদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় নির্মিত ডকুমেন্টারিগুলো মাঠপর্যায়ে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি জেলায় কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের অনুমোদন এবং জেলা তথ্য উপদেষ্টা কমিটির কার্যক্রম জোরদারের কথা বলা হয়। দেশে জঙ্গি দমন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে জঙ্গি দমন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে সরকারের পক্ষ হয়ে রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের শামিল হতে হবে। রাষ্ট্রের চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে এটি যে তাদের সাংবিধানিক কর্তব্য, তা আমরা মনে করিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় সরকার এবং জনগণের মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, সংবেদনশীল জায়গা। সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে জেলা প্রশাসকরা। তারা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে। সরকার তাতে উপকৃত হয়। সরকারও তাদের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে আলাপ করে যাতে সেটা বাস্তবায়ন হয়। তথ্যমন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে জঙ্গি দমনের যুদ্ধ চলছে, উন্নয়নের যুদ্ধ চলছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ চলছে— এ তিনটি যুদ্ধে জেলা প্রশাসকদের সংবিধানের নির্দেশিত পথে দাঁড়িয়ে এর চার নীতির আলোকে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। আমরা মনে করি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জেলা প্রশাসকদের জঙ্গি দমন, উন্নয়ন ও সুশাসনের যুদ্ধে যথাযথ ভূমিকা রাখা তাদের সাংবিধানিক কর্তব্য। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমনে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। জঙ্গিবাদ নির্মূলে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করবে। কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান ও নাটক-উপন্যাস সার্বক্ষণিক প্রচারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত লিখিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি স্টেডিয়াম, প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার বার্ষিক বরাদ্দ বৃদ্ধি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাতক্ষীরা জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আকর্ষণ ছিল ইনোভেশন সামিট, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৬ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর অধিবেশনগুলো সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিসিদের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। সম্প্রতি জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে জঙ্গি মোকাবিলায় সতর্ক থাকা এবং জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। ডিসি সম্মেলনের শেষ দিন গতকাল বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সেলের কথা বলেছি। যদি তারা মনে করেন, যে কোনো সময় প্রসিকিউশন থেকে বিচার বিভাগকে ঠিকমতো সহায়তা করা হচ্ছে না, তাহলে জেলার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে তাত্ক্ষণিক যেন তারা সেই সেলের কাছে জানায়। আমরা সহযোগিতা করব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যখন মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়, তখন যে বিষয়গুলো উঠে আসে এবং তারা সে বিষয়ে সমাধানের কথা বলেন। যেগুলো তাত্ক্ষণিক সমাধান দেওয়া যায়, তা সমাধান করা হয়। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে বিষয়গুলো ছিল তা সমন্বয় করার বিষয়। সে ক্ষেত্রে ডিসিদের কোনো প্রশ্ন ছিল না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই উন্নয়নে শরিক হওয়ার জন্য ডিসিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সংকট সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের প্রথম অধিবেশন শেষে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলছে। বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, জনপদ ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই সন্ত্রাস দমনে ডিসিদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাল্ক শিপের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়ে সরকারকে সহায়তা করতে বলা হয়েছে তাদের বলেও জানান তিনি। অবৈধ দখলদারদের সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, নদী বাঁচাতে যা যা করা দরকার তার সবই আমরা করব। জেলা প্রশাসকদের কাছে আমরা সেই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।

সর্বশেষ খবর