শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতায় শাহজালাল

♦ যে কোনো পথ দিয়েই প্রবেশ করা যায় ভিতরে
♦ রানওয়ে জুড়ে বিশৃঙ্খলা, মালামাল পড়ে যাছে যত্রতত্র
♦ মানিএক্সচেঞ্জ কর্মীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতায় শাহজালাল

ভয়ঙ্কর নিরাপত্তাহীনতায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কার্গো ভিলেজ থেকে রানওয়ের বড় অংশ জুড়েই বিশৃঙ্খলা। এলোমেলোভাবে যত্রতত্র পড়ে আছে মালামাল। দেখার কেউ নেই। বিমানবন্দরে প্রবেশে সব সময় থাকছে দীর্ঘ যাত্রীজট। অথচ ভিতরে বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের লোকবলের নেই সঠিক কোনো পরিসংখ্যান। তারা ভিতরে অনায়াসে প্রবেশ করলেও হেনস্তায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীসাধারণকে। অরক্ষিত বিমানবন্দরে যে কোনো অঞ্চল দিয়েই প্রবেশ করা যাচ্ছে। টার্মিনালের বাইরের অঞ্চলে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। বিমানবন্দরের ভিতর মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলোর ছড়াছড়ি। তাদের জনবল কত কেউ জানে না। প্রতিটি মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির সামনে অন্তত ছয়-সাত জন স্টাফ দাঁড়িয়ে হাঁকডাক দিচ্ছেন। সেবার নামে যাত্রীসাধারণের সঙ্গে অসদাচরণও করছে তারা। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শাহজালাল বিমানবন্দর অরক্ষিত, এটা ঠিক নয়। শাহজালাল এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত। বাইরে দিয়ে আসার কোনো পথ নেই। তবে কাস্টমসে মালামাল সংরক্ষণ নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। এগুলো বেশি দিন থাকবে না। আশা করছি এক মাসের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি মনি করি, যাত্রী হয়রানিও নেই। এ ছাড়া ইমিগ্রেশন বিভাগটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। এর পরও আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কোনোভাবেই যেন কোনো যাত্রী হয়রানির শিকার না হন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে।’ গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেনি মানি এক্সচেঞ্জ ও ইমপেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জের সামনে কয়েকজন স্টাফ দাঁড়িয়ে নানাভাবে হাঁকডাক দিচ্ছেন। নারীদের নানা ইঙ্গিতে উত্ত্যক্ত করছেন তারা। সুবিধার চেয়ে যাত্রীসাধারণকে বিরক্ত হতেই দেখা গেছে। তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সেবার নামে যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ দেখার নেই কেউ। দেখা গেছে, সবকিছুতেই লাগামছাড়া ভাব। বিদেশে বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নিরাপত্তাবলয় থাকলেও শাহজালালে উল্টো। বিদেশে কঠোর নিরাপত্তা যেমন আছে, তেমন যাত্রীরা হয়রানি থেকে মুক্ত। কিন্তু শাহজালাল অরক্ষিত হওয়ায় যাত্রীসাধারণই নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসা-যাওয়ার পথে শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন। শাহজালালে প্রবাসী ডেস্ক থাকলেও তা শুধু নামেই। সাধারণ যাত্রী, বিশেষ করে পড়াশোনা কম জানা শ্রমিকরা সেবার পরিবর্তে সব সময় নানাভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে আগমনী ও বহির্গমন ফরম পূরণ করতে গিয়ে এই শ্রমিকশ্রেণিকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। সেখানে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। এদিকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারেও নেই কোনো নিয়মশৃঙ্খলা। রাজনৈতিক বা ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে যে-কেউ ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করছেন। সেখানেও ঢিলেঢালা নিরাপত্তা। লাগেজ হ্যান্ডলিংয়েও এখনো শৃঙ্খলা আসেনি। বহির্বিশ্বে ১০ মিনিটে লাগেজ পাওয়া গেলেও শাহজালালে এখনো লাগেজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বিদেশফেরত যাত্রীদের অগ্রাধিকার থাকলেও লাগেজ নিয়ে তাদেরই বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ইমিগ্রেশনে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের প্রাধান্য নেই। ওই এলাকায় এখনো ইঁদুর-বিড়াল দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। ময়লা-আবর্জনা, ধুলাবালিসহ নোংরা পরিবেশ। বিশ্বের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে এ দৃশ্য দেখা যায় না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে এখনো অরক্ষিত। রানওয়ের সামনে এখনো যত্রতত্র মালামাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। বোর্ডিং ব্রিজে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন যে পরিমাণ পণ্য আকাশপথে আমদানি হচ্ছে, এর অর্ধেকও বর্তমানে বিমানবন্দরের গোডাউনে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব পণ্য গোডাউনের বাইরে রানওয়ে, বে-এরিয়াসহ খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে কোন পণ্য কোন বিমানে, কত তারিখে এসেছে তার সিরিয়াল থাকছে না। ফলে পণ্য খুঁজে পেতে দিনের পর দিন সময় লাগছে। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বুঝে পাচ্ছেন না আমদানিকারক। অনেক ক্ষেত্রে গায়েব হয়ে যাচ্ছে শত কোটি টাকার পণ্য। আবার রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান এসব পণ্যসামগ্রী। বিমানবন্দরে সরেজমিন ঘুরে এবং আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা, কার্গো হ্যান্ডলিং কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দরের এ সংকটের অন্যতম কারণ বিমান কর্তৃপক্ষ ও সিভিল এভিয়েশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। বিমানবন্দরের পুরো জায়গার মালিকানা সিভিল এভিয়েশনের। বাংলাদেশ বিমান এ জায়গা লিজ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ করে সিভিল এভিয়েশন। বিমান কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোর কাজ করে না। এ ছাড়া অপরিকল্পিত কার্যক্রম, জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব অন্যতম কারণ। সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য ১৭ হাজার বর্গফুট এলাকা রয়েছে। কিন্তু সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার প্রকল্পটি প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে রেখেছে, যেখানে এখন আর পণ্য রাখা যাচ্ছে না।

প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা প্রত্যাহার : ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানিয়েছেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, ইফতেখারের জায়গায় সিভিল এভিয়েশনের একজন উপ-পরিচালক সাময়িকভাবে এ দায়িত্ব পালন করবেন।

সর্বশেষ খবর