শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার হুমকি এখন মানিচেঞ্জার কার্যালয়। ইমিগ্রেশন ও লাগেজ এরিয়ায় গড়ে ওঠা মানিচেঞ্জার দোকানগুলোর সামনে ব্যবসায়ী ও দালালদের ‘ডলার-রিয়েল’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি, যাত্রীদের নিয়ে টানাহেঁচড়ায় রীতিমতো মাছবাজারে পরিণত হয়েছে দেশের আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরটি। প্রায় প্রতিদিনই যাত্রী সাধারণ লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন এই চক্রের হাতে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন পর মধ্যপ্রাচ্য ফেরত ও নারী যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এতে করে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে এ চক্রটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় প্রতিদিনই মানিচেঞ্জারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাত্রী হয়রানি থেকে শুরু করে সোনা ও অর্থ পাচারে এসব মানিচেঞ্জার জড়িত। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ডলার বেচাকেনায় তারা কোনো নিয়মনীতি মানছে না। ডলার বিক্রি করছে তারা উচ্চমূল্যে। আর কিনছে কম মূল্যে। মুদ্রা রূপান্তরের পর যাত্রীদের রসিদ তারা দেয় না। এদেরই আরেকটা গ্রুপ রয়েছে, যারা ডলার বেচাকেনার নামে মানুষ ঠকাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে গছিয়ে দিচ্ছে জাল ডলার। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছেই তাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অভিযোগ দেওয়ারও উপায় থাকে না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে স্পর্শকাতর এলাকা ইমিগ্রেশন ও লাগেজ এরিয়ার উত্তর দিকে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মানিচেঞ্জার দোকান রয়েছে। কাচ দিয়ে ঘেরা এই দোকানগুলোর ভিতর দুজনের স্থান নির্ধারিত থাকলেও সেখানে দেখা যায় ৫ থেকে ৬ জন করে বসে আছেন। এদের অধিকাংশই দালাল।
জানা গেছে, যাত্রীরা ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরিয়ে আসার সময় দালালদের দেখা পান। মানিচেঞ্জারের এই দালালরা যাত্রীদের সেখান থেকে তাদের দোকানগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে প্রায় জবরদস্তি করে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে কম মূল্যে ডলার কিনে নিচ্ছে। আবার কোনো যাত্রী নিজ থেকেই মানিচেঞ্জারের দোকানের দিকে এগোতে থাকলে তো কোনো কথাই নেই। চারপাশ থেকে মানিচেঞ্জারের দালালরা ছুটে আসে। কেউ হাত ধরে টানছে, কেউ টানছে ব্যাগ। আবার কেউ পাসপোর্ট ধরে টানাটানি করতে থাকে। যাত্রীদের এভাবে টানাহেঁচড়া করে কোনো দোকানের সামনে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, মানিচেঞ্জারের এই ব্যবসায়ী, কর্মচারী আর দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি সংস্থার কর্মকর্তা জানান, মানিচেঞ্জারের দোকানগুলো এখন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশের বিমানবন্দরেই এমন স্পর্শকাতর জায়গায় এ ধরনের কোনো দোকান দেখা যায় না।