শিরোনাম
সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মরার আগে আমি মরতে রাজি নই

--------- প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ আগস্টের মতো আর ঘটনা যেন না ঘটে সেটাই আমরা চাই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বার বার মৃত্যু আমার পিছু ছুটেছে। কিন্তু মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। কারণ আমি জাতির পিতার কন্যা, সেটা সব সময় মনে রাখি। আর জন্মালে মরতে হবেই। এটা যে কোনো সময় আসতে পারে। কাজেই বাধা-বিপত্তি যা-ই আসুক। মরার আগে আমি মরতে রাজি নই। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথানত করি না। আল্লাহর কাছে সেজদা দিই, আল্লাহর কাছেই মাথানত করি, আর কারও কাছে করি না। ন্যায় ও সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য। গতকাল বিকালে গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন ও দোয়া-মোনাজাত করা হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে ২১ আগস্ট নিহতদের স্বজন ও আহতদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাদের খোঁজখবর নেন। তাদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও  বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং সরকারের মন্ত্রীগণ, সংসদ সদস্যবর্গ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ত্যাগ করার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ২১ আগস্টের অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ট্রাকের ওপর জয় বাংলা বলে বক্তব্য শেষ করে হাতের মাইক্রোফোন রাখার পরপরই গ্রেনেড মারা শুরু হয়। একটার পর একটা মারতেই থাকে। দিবালোকে এভাবে গ্রেনেড মারা কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, আমি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা তখন। ওই ট্রাকে আমাদের সব নেতা। ওই র?্যালিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত। একটার পর একটা গ্রেনেড মারতে শুরু করেছে। জানি না আমার কী ভাগ্য, গ্রেনেড ট্রাকের ভিতরেই পড়ার কথা। কিন্তু সেখানে না পড়ে, ডালায় লেগে পাশে পড়ে যায়। আমাদের সাবেক মেয়র হানিফসহ ওখানে যারা ছিল, তারা আমাকে ঘিরে ধরে। আমি টের পাচ্ছি সব স্প্লিন্টার হানিফ ভাইয়ের মাথায় এসে লাগছে। আমার গায়ে গরম রক্ত বেয়ে পড়ছে। একটার পর একটা গ্রেনেড মেরেছে। ১৩টি গ্রেনেড তারা ছুড়েছিল। তার মধ্যে ১১ থেকে ১২টি ফুটেছিল। ওই অবস্থা যখন চলে, মনে হচ্ছিল কেয়ামত এসে গেছে। সমাবেশের আশপাশে পুলিশের কোনো তত্পরতা দেখা যায়নি। কোনো নিরাপত্তাবলয় ছিল না। কোটালীপাড়ায়ও আমাকে মেরে ফেলতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যিস এক চা দোকানির কারণে এ বোমা থেকে বেঁচে যাই। তিনি বলেন, আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে কিছু কাজ দিয়ে দুনিয়ায় পাঠান। আমার কিছু কাজ হয়তো এখনো বাকি আছে। সেজন্য আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, যারা গ্রেনেড মেরে মানুষ খুন করে, তাদের স্থান যেন বাংলার মাটিতে না হয়। ওরা মানুষের কল্যাণ চায় না। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন সুষ্ঠুভাবে চলছে, কিছু বিদেশি শক্তি যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের চক্রান্ত এখনো চলছে। জঙ্গিবাদ দূর করতে আমরা যখন বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলছি, তখন তারা জঙ্গিবাদে মদদ দিয়ে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় বিএনপি জড়িত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে নাড়া দেয়নি। উল্টো বলল, সারা দেশে রটালো— গ্রেনেড হামলার ঘটনা আমরাই (আওয়ামী লীগ) ঘটিয়েছি। আমার প্রশ্ন— আমরা কি সেদিন সেখানে সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় মানবতাবিরোধী ঘটনার পর সংসদে কথা বলতে দেয়নি বিএনপি সরকার। আমি তখন বিরোধীদলীয় নেতা। কী দুর্ভাগ্য, নিন্দা প্রস্তাবও নেওয়া হয়নি সংসদে। এতেই স্পষ্ট হয় কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এ ঘটনার কিছু দিন আগে বক্তব্যে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা আমি বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না। গ্রেনেড হামলার পর খালেদার এ বক্তব্য প্রকাশ পেতে শুরু করে— কেন বলেছিলেন আমি বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না। এর আগে খালেদার পুত্র তারেক রহমান ধানমন্ডি ৫ নম্বরে তার শ্বশুরবাড়িতে এক টানা দশ মাস ছিল। পহেলা আগস্ট সেনানিবাসের বাসায় ফিরে যায়। টানা এতদিন ধানমন্ডিতে কেন ছিল, সেখানে ষড়যন্ত্র করতে সুবিধা? তাদের প্রতিটি বক্তব্যে আভাস ছিল আমাকে হত্যার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ওই দিনের ভয়াবহ এ হামলায় আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। অজ্ঞাত ছিল আরও দুজন।

 জানি না তারা কারা, হয়তো হামলাকারীরাও হতে পারে। এত বড় একটি ঘটনা ঘটল, পুলিশ ছিল নীরব। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ, আহত মানুষের আর্তনাদ। সেখানে আহত মানুষ কাতরাচ্ছে তাদের উদ্ধার না করে, পুলিশ তৎকালীন সরকারের নির্দেশে টিয়ার (কাঁদানে) গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। গ্রেনেড হামলার বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলাকারীরা যাতে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে, সে জন্য পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে। লাঠিচার্জ করা হয়েছে। একটি ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে আলামত সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে। কিন্তু তারা আলামত নষ্ট করেছে। যতটা সম্ভব হয়েছে নিজেদের নেতা-কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করেছে। বিএনপি এ ঘটনার তদন্ত করল না, আলামত সংগ্রহ করল না। কোথাকার, কোন গ্রামের একজনকে ধরে জজ মিয়া নাটক সাজালো, সে হামলা করেছে। সেদিনের ডাক্তারদের আচরণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেই দিন হাসপাতালগুলোতে বিএনপি মনোভাবাপন্ন একজন ডাক্তারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমাদের (আওয়ামী লীগ) মনোভাবাপন্ন ডাক্তাররা হাসপাতালগুলোতে ছুটে গিয়েছেন। কী জঘন্য মনোভাব নিয়ে তারা চলেছে! শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছি। জাতির পিতা যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সারা জীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন সেই লক্ষ্য নিয়ে আমিও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছি বিনিময়ে গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলার শিকার হচ্ছি। তিনি বলেন, আল্লাহ রক্ষা না করলে এই ভয়াবহ হামলা থেকে আমি রক্ষা পাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা আর চাই না এ ধরনের ঘটনা আর বাংলাদেশে ঘটুক। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আমরা চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশের উন্নয়ন।

শ্রদ্ধা নিবেদন : কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দল এবং মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, আওয়ামী যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি (জেপি), যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, সৈনিক লীগ, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী মত্স্যজীবী লীগ, হকার্স লীগ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগ সংগঠনসহ অন্যান্য সংগঠন গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

সর্বশেষ খবর