বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পল্টন মোড় আটকে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জবি প্রতিনিধি

পল্টন মোড় আটকে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

হলের দাবিতে গতকাল রাজধানীর পল্টন মোড়ে অবরোধ করে জবি শিক্ষার্থীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

নতুন হলের দাবিতে ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ‘হল চাই, হল চাই’ এই স্লোগান নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল নতুন হল নির্মাণের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পল্টন মোড়ে আন্দোলনের ফলে গুলিস্তান-কাকরাইল, মতিঝিল-প্রেসক্লাব সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে আশপাশ এলাকাসহ পুরো রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জমিতে আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে ২৩তম দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন। একপর্যায়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তচত্বরে জড়ো হন। পরে তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলনের স্লোগান দিলে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও নিজ নিজ বিভাগের ব্যানার নিয়ে দলে দলে এসে জড়ো হন। শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে পুরো ক্যাম্পাসে হল চাই স্লোগানে কম্পিত হতে থাকে। পরে তারা মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাজধানীর রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান হয়ে পল্টন মোড়ে পৌঁছলে পুলিশি বাধায় সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আশপাশ এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। শিক্ষার্থীরা দেয়ালে, বাসে ও রাস্তায় বিভিন্ন লিখনির মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন। আন্দোলনকারীরা কেউ খালি দেহে আবার কেউ কেউ পরিধান করা কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের চিকা মেরে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীরা পল্টন মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় আশপাশে সব যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। যাত্রীরা পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যান। শিক্ষার্থীরা দাবি করে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এই আন্দোলনে মানুষের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের এই হল আন্দোলন করছি। আমরা কষ্ট করে মেসে বা বাসা-বাড়িতে অবস্থান করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। এদিকে রবিবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসা ও তাদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। এদিকে গতকাল বিকাল ৩টায় জবির উপাচার্যের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনের কথা বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে অবিলম্বে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব বলে আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।

কর্মসূচি : গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আগামী শুক্রবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংহতি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য বা ঘোষণা না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এ ন্যায্য আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন তারা। তবে শনিবারের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে আগামী রবিবার আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠনের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমস্যার সমাধানে সরকার সচেষ্ট : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল সমস্যার সমাধানে সরকার সচেষ্ট রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ, মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর