কাঞ্চন-কুড়িল ৩০০ ফুট প্রশস্ত সড়কের (বিশ্বরোড) পাশে ভোলানাথপুর এলাকায় রাজউকের প্রায় হাজার কোটি টাকার জমি জবরদখল করে ‘নীলা মার্কেট’ গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি আলম নীলা রাজউকের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই মার্কেটটি তুলেছেন। কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই এখানে তাঁতবস্ত্র, কুটির শিল্প ও বিনোদন মেলার নামে চালানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক ব্যবসা। এসব থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রশাসনের চোখের সামনে জবরদখলসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও তারা চোখ বুজে রয়েছে বলে অভিযোগ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নীলা মার্কেটে পাকা-আধাপাকা মিলিয়ে কয়েকশ দোকান। এসব দোকান থেকে রোজ প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। মার্কেট ঘিরে আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এসব আস্তানায় অতি সহজেই মিলছে মরণ নেশার জন্য বিভিন্ন মাদক। শুধু তাই নয়, এই মার্কেটের আশপাশ নির্জন এলাকা বলে সেখানে প্রতিদিন শত শত যুবক-যুবতী ঘুরতে এসে অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। নীলা মার্কেটের সামনেই কবরস্থান। কবরস্থানের ভিতরেই ‘মাদক ভাণ্ডার’ গড়ে তুলে খুচরাভাবে ক্রেতাদের কাছে হরদম বিক্রি করা হচ্ছে মাদক। জানা গেছে, পূর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার স্বার্থে ভোলানাথপুরসহ আশপাশে ছিমছাম রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ ফুট সড়কটি দিয়ে চলাফেরা করাটাও অনেক স্বস্তিকর। সড়কের আশপাশের এলাকাগুলো খুবই নির্জন। তাই রাজধানীসহ অন্যান্য এলাকার মানুষ এখানে ঘোরাঘুরি করতে আনন্দ পায়। অভিযোগ উঠেছে, এই বাস্তবতায় উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি আলম নীলা ভোলানাথপুর ৩০০ ফুট সড়কের পাশেই রাজউকের প্রায় হাজার কোটি টাকার জমিতে গড়ে তুলেছেন দোকানপাট। এখন এর নাম নীলা মার্কেট। অভিযোগ রয়েছে, মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকানের পজেশন বিক্রি করা হয়েছে। একেকটি দোকানের পজেশন ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। নীলা মার্কেটে যেসব ব্যবসায়ী পজেশন কিনেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন— শওকত আলী, সিরাজ মিয়া, আলমাস মেম্বার ও মাসুদ মেম্বার।
রোজ এই মার্কেটে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। এ সুযোগে নীলার নির্দেশে তার স্বামী শাহআলম ফটিক ও তাদের লোকজন প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন। যুবক-যুবতীদের অসামাজিক কাজের সুবিধার্থে কয়েকটি রেস্টুরেন্টে ভাড়াভিত্তিক রুম চালু আছে। রুম ভাড়া ঘণ্টায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। নীলা মার্কেটের আশপাশে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। এসব জুয়ার আসরে প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকার খেলা চলে। জুয়া খেলতে বেশির ভাগ লোকই আসে রাজধানী থেকে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনও জুয়া খেলে। মাদক ও জুয়ার স্পট থেকেও আয় হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।ঈদের পরদিন থেকেই কোনো অনুমতি না নিয়ে তাঁতবস্ত্র, কুটির শিল্প ও বিনোদন মেলার নামে চালানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক ব্যবসা। ওই মেলায় প্রবেশের টিকিটের মূল্য ১০ থেকে ২০ টাকা। সেখানে গভীর রাতে জাদু প্রদর্শনের নামে চলে অশ্লীল নৃত্য। জনশ্রুতি এই যে, প্রশাসন মেলা থেকে মাসোয়ারা নেয় বলেই তারা নির্বিকার। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নীলা মার্কেটের বিশেষ চেম্বারে সময় দিতে দেখা যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে নীলার বিরুদ্ধে কেউ টুঁ-শব্দটিও করে না। এ ছাড়া তার ভাই বকুল এলাকার নিরীহ মানুষজনকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার বাণিজ্য থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নীলার নামে মাসে ৫০ লক্ষাধিক টাকা আদায় হচ্ছে বলে চাউর রয়েছে। নীলাকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আলাদাভাবে চলছে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বোঝানো হয়েছে এ বাজারটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। ভালো বেচাকেনা হওয়ার সুবাদে এসব ব্যবসায়ী মৌখিকভাবে পজেশন কিনেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রাজউকের জমিতে অবৈধভাবে নীলা মার্কেট নির্মাণ বিষয়ে লেখালেখি হলে উচ্ছেদের আশঙ্কায় তারা এখন তটস্থ। তবে জানা গেছে, যে কোনো মূল্যে এই মার্কেট অক্ষত রাখবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন নীলা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফেরদৌসি আলম নীলা বলেন, পূর্বাচলের প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামের জায়গায় অস্থায়ীভাবে বাজারটি বসানো হয়েছে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন নিজেদের উৎপাদিত ফল-ফসলাদি এ বাজারে বেচাকেনা করে জীবিকানির্বাহ করে থাকেন। সেই বাজারকে ঘিরে কোনোরকম চাঁদাবাজি সংঘটিত হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌসি আলম নীলা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারকে কেন্দ্র করে মেলার নামে জুয়া, নগ্ন নৃত্য, মাদক বাণিজ্য ঘটে থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, এ বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজউক কর্তৃপক্ষ দেখবে। রাজউক যদি উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।