টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানা মালিকের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। তবে ওই কারখানার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও বেতন-ভাতার অর্থ ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে বাধা নেই। একই সঙ্গে এ তিন খাতে এ পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় হয়েছে সে বিষয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিয়ে কারখানা মালিককে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই কারখানায় হতাহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কারখানা মালিক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. মকবুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া ও তানিম হোসেন শাওন। কারখানার মালিকপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। ১৯ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্ল্যাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি এ রিট করে। ২১ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে আদেশের দিন ধার্য হয়। ১০ সেপ্টেম্বর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ছাদের একটি অংশ ধসে পড়ায় এ পর্যন্ত বহু হতাহত হয়েছে। এ ঘটনায় কারখানার মালিক মকবুলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার ১৬ দিন পর গতকাল দুপুরে আরও তিনজনের পোড়া দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ ভবন থেকে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত তিনজনের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বাহিরনগর গ্রামের মোজাম মোল্লার ছেলে মো. চুন্নু মোল্লা। দেহাবশেষটি উদ্ধারের সময় একটি মানিব্যাগ পাওয়া যায়। ওই মানিব্যাগে রক্ষিত ইউসিবি ব্যাংকের একটি ভিসা কার্ড থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। অন্য দুই লাশের স্বজনরা পোড়া লাশের কিছু অংশ দেখে বুঝতে পেরে দাবি করেন এর মধ্যে একজন হলেন আনিসুর রহমান, অন্যজন নাছির পাটোয়ারী। এই তিনজন একই মেশিনে কাজ করতেন এবং একই স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরেই স্বজনদের দাবি। লাশ উদ্ধারের পর টঙ্গী থানা পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যান। দিন যতই যাচ্ছে লাশের সংখ্যা ততই বাড়ছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে এ নিয়ে লাশের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৯-এ। আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, গতকাল দুপুরে বর্জ্য সরানোর সময় ধ্বংসস্তূপের মাঝ এলাকা থেকে আরও তিন শ্রমিকের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টঙ্গী থানার এসআই ও টাম্পাকো দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুমন ভক্ত জানান, ওই দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়াও ওই ঘটনায় নিখোঁজ ১১ জনের নাম জেলা প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে। অজ্ঞাতদের লাশ শনাক্তে বুধবার পুলিশের সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে নিখোঁজ শ্রমিক জয়নুল আবেদিন (৩৮), অপারেটর রেদোয়ান আহমদ (৩৭), কারখানার স্কুটিং অপারেটর মো. অনিসুর রহমান (৩০), সহকারী অপারেটর মো. জহিরুল ইসলাম (৩৮), অপারেটর রিয়াজ হোসেন মুরাদ (২২), আজিম উদ্দিন (৩৫), নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী (৩৫), মাসুম আহমেদ (৩০), রফিকুল ইসলামের (৩০) পরিবারের দুজন করে মোট ১৮ জন স্বজনের রেফারেন্স ডিএনএ (লালা ও রক্ত) দিয়েছেন। এদিকে ভয়াবহ এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সংস্থার পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন সদস্যবিশিষ্ট তিতাস গ্যাস কমিটি বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে টাম্পাকো কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পরপর বিসিকে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিসিকে প্রবেশের প্রধান সড়কটি বন্ধ করে দেওয়ায় এমনটি হয়েছে। বিসিকের গার্মেন্ট মালিকরা এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, বর্তমানে কারখানার মালবাহী গাড়ি মধুমিতা সড়ক দিয়ে চলাচলের কারণে যানজট লেগেই থাকে। ফলে মধুমিতা থেকে বিসিক পৌঁছাতে লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এতে ব্যবসায়ীদের মাল আনা-নেওয়ায় চরম অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া এ ঘটনার খবরে বিদেশি ক্রেতারা বিসিকে প্রবেশ করছেন না। এ রকম চলতে থাকলে এখানকার ব্যবসার বারোটা বেজে যাবে। স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল হোসেন বলেন, ঘটনার পরপর টাম্পাকো কারখানার পুব পাশ দিয়ে বিসিকে ঢোকার প্রধান সড়ক ও পশ্চিম পাশের সড়কটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে বিসিকের ব্যবসায়ী ও মালবাহী গাড়ি মধুমিতা সড়কটি ব্যবহার করায় প্রায়ই সেখানে যানজট লেগে থাকে। এতে দুর্ভোগের শিকার হয় এলাকাবাসী।