বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কে এই বদ বদরুল

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

কে এই বদ বদরুল

কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টাকারী বদরুল আলমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়। উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মনিরজ্ঞাতি গ্রামের সৌদিফেরত মৃত সৈয়দুর রহমানের ছেলে তিনি। ওসমানী হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন থাকাকালে বদরুলকে দেখতে যাননি তার মা, ভাই-বোনেরা। দক্ষিণ খুরমার মনিরগাতি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বদরুল এসএসসি ও গোবিন্দগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি)। ব্রেন স্ট্রোকে বাবার মৃত্যুর পর অর্থনীতির ছাত্র বদরুল অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে লজিং থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। শাবিতে ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সুমন গ্রুপে যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ শাবি ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এই দায়িত্ব দেওয়ার পর ১০ মে লেখা এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কৃতজ্ঞতা জানান বদরুল। বদরুলের ব্যক্তিগত ফেসবুক দেওয়া স্ট্যাটাসগুলোর বেশির ভাগই রাজনৈতিক ও উপদেশমূলক। খাদিজাকে কোপানোর কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে বদরুল লেখেন, ‘নিষ্ঠুর পৃথিবীর মানুষের কাছে আমি সবিনয়ে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া কেউ আপন নয়।’ এদিকে বদরুলের নৃশংস কর্মকাণ্ডের শাস্তি চেয়েছেন তারই গর্ভধারিণী মা দিলারা বেগম। প্রায় অন্ধ এই বিধবা নারীর পাঁচ সন্তানের পরিবারে বদরুলই ছিলেন একমাত্র আশার আলো। গতকাল সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে এই প্রতিবেদককে দিলারা বেগম বলেন, ‘আমার ফুয়ায় (ছেলে) জঘন্য অপরাধ করছে। আমি চাই তার শাস্তি ওউক। এর লাগি হাসপাতালেও তারে দেখতাম গেছি না।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ‘আমি এত কষ্ট করি তারে লেখাপড়া করাইলাম। আর হে গিয়া এমন কাম করল, যার লাগি দেশত মুখ দেইতাম ফররাম না। ফরার (পরের) ফুড়িরে (মেয়েকে) ইলা জালিমর রাখাম মারল।’ তিনি বলেন, ‘আমি অভাবী মানুষ। মানুষর কাছ থাকি সায়-সাহায্য লইয়া তারে লেখাপড়া করাইছি। বিদেশ থাকি আওয়ার পর তার বাপে জাগা-জমি নষ্ট করিলাইছালা। তার উপরেঅউ আমরার অনেক আশা-ভরাসা আছিল।’ চাচা আবদুল হাই বলেন, ‘আগে তো ভালা চলত। কিন্তু তার ভিতরে যে কিতা আমরা জানতাম না। আমরা তারে খাছ দিলে পড়াত দিছলাম। সারা পরিবারের আশা-ভরসা আছিল তার উপরে।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘এই কুলাঙ্গারের মুখ দেখতাম চাই না।’ সিলেটের জাঙ্গাইল এলাকায় লজিং থাকাকালে স্কুলছাত্রী খাদিজাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতেন বদরুল। ২০১২ সালের ২০ জানুয়ারি খাদিজার গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থানীয়দের হামলার শিকার হন তিনি। এতে তার পায়ে, হাতে ও পিঠে গুরুতর জখম হয় এবং পায়ের একটি রগ কেটে যায়। ওই সময় এ হামলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শিবিরকে দায়ী করেছিল। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হন বদরুল। বদরুলের সহপাঠীদের অনেকেই জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত থাকাকালে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কলেজে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই তিনি খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, বদরুল সৌদিফেরত দরিদ্র কৃষকের সন্তান। চার ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। চার বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়। টানাপড়েনের সংসারের হাল ধরে রেখেছেন দর্জিদোকানি বড় ভাই।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বদরুল ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ আয়েজুর রহমান উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন কৃষিকাজ করে এবং অন্যজন স্কুলে পড়ে। একমাত্র বোন ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ কলেজে স্নাতকের ছাত্রী। দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির জানান, একসময় বদরুলকে ভালো বলেই জানতেন তিনি। শান্ত স্বভাবের ছিলেন। আগে রাজনীতি করতেন না। তিনি জানান, কয়েক বছর আগে জামায়াত-শিবিরের হাতে গুরুতর আহত হন বদরুল। এরপর অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করা হয় তাকে। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের হাতে মার খাওয়ার পর বদরুল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

প্রসঙ্গত, সোমবার সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে খাদিজাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন বদরুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলার ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। খাদিজা বর্তমানে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর