রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল রয়েছে।
আইসিইউতে অচেতন খাদিজা ভেন্টিলেটর মেশিনের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক ডা. মীর্জা নাজিমউদ্দিন গতকাল দুপুরে বলেছেন, আগামী শনিবার খাদিজার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানো যাবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এদিকে খাদিজার বাবা মাসুক আহমেদ গতকাল সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। দুপুরে চীন থেকে ফেরেন তার ভাই। খাদিজার বাবা হাসপাতালে মেয়ের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বদরুলের বিচার ট্রাইব্যুনালে করার দাবি জানান। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদ ও বদরুলের বিচার দাবিতে সিলেটের সর্বত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভ মিছিল আর সমাবেশে সিলেট গতকালও ছিল উত্তাল। স্কয়ার হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক ডা. মীর্জা নাজিমউদ্দিন গতকাল বলেন, চিকিৎসকরা খাদিজাকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার বিকালে লাইফসাপোর্টে থাকা খাদিজার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয়নি আবার অবনতিও হয়নি। শনিবার (৮ অক্টোবর) নাগাদ খাদিজার শারীরিক অবস্থার অবনতি বা উন্নতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে। দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যান খাদিজার বাবা। স্কয়ার হাসপাতালে খাদিজাকে দেখে বাবা মাসুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমার মানসিক অবস্থা ভালো নেই। সবাই শুধু আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন। যেন আল্লাহ ওকে সুস্থ করে দেন। বদরুল সম্পর্কে মাসুক আহমেদ বলেন, আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছি। শুধু সন্তানদের মানুষ করব সেটাই ভেবেছি। বদরুল আমার বাড়িতে লজিং ছিল সেটা আমি এই ঘটনার পর জানতে পেরেছি। তবে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন আমার ভাই আবদুল কুদ্দুস। এখন তো দেখছি আমার বাড়িতে বিষাক্ত সাপ হয়ে ঢুকেছিল।সিলেটের সর্বত্র আন্দোলন : সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসকে নির্মমভাবে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার প্রতিবাদে সিলেটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও লাগছে আন্দোলনের ঢেউ। টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকালও বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে খাদিজার সহপাঠীরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। এদিকে আন্দোলনের মুখপাত্র ও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফজিলাতুন্নেসাকে ‘হত্যার’ হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পূজা ও পরীক্ষা থাকার কারণে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। গত সোমবার বিকালে এমসি কলেজে খাদিজাকে নৃশংসভাবে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পরদিন থেকেই সিলেটে দানা বাঁধে আন্দোলন। সেই আন্দোলন ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও লাগছে আন্দোলনের হাওয়া। নির্মম সেই ঘটনার প্রতিবাদে এবং বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে সিলেটের সর্বত্র। গতকালও দিনভর সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন স্থানে হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে সিলেটের অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মো. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করা হবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের সভায় গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভা থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের মতো মামলাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে সেসব মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। খাদিজাকে কোপানোর মামলাও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরাও গতকাল আন্দোলনে নেমেছেন। তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। এ ছাড়া খাদিজার গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের আউশায়ও মানববন্ধন হয়। সেখানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক সুজাত আলী রফিক অংশ নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মানববন্ধনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আসমা কামরান, সাংগঠনিক সম্পাদিকা এ জেড রওশন জেবিন রুবা, মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সামিয়া চৌধুরীসহ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক ছাত্রী ও নারীনেত্রীরা অংশ নেন। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে খাদিজাকে কোপানোর প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনের মুখপাত্র ফজিলাতুন্নেসাকে ‘হত্যার’ হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফজিলাতুন্নেসা জানান, গতকাল দুপুরে তার মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল করে আন্দোলন থেকে তাকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়। অন্যথায় খাদিজার মতো তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। এদিকে পূজার ছুটি ও পরীক্ষার কারণে আগামী ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন। এ সময়ের মধ্যে বদরুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর না হলে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। সেই কর্মসূচি গতকাল শেষ হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকালে এমসি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময় শাবির অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খাদিজা বেগমকে গুরুতর আহত করেন। খাদিজা ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন।