শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানুষ দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে শিশুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাশবিক নির্যাতনের শিকার শিশুটি ভয়ে কাঁদছে। থামছে না এ কান্না। কাউকে দেখলেই আঁতকে উঠছে। তার শারীরিক অবস্থাও গুরুতর। শিশুটির প্রজনন অঙ্গের ক্ষত হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে। যে কারণে সেখানে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণকেই এখন গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) চিকিৎসকরা। ফরেনসিকের পর আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। এ সময় তাকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে নেওয়া হয়। একই সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য নয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আজ বোর্ডের সভায় শিশুটির পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় ঠিক করার কথা রয়েছে।

দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার পাঁচ বছরের ওই শিশুটির অঙ্গহানির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে শিশুটির জীবনহানির কোনো শঙ্কা নেই। গতকাল নিজ কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ক্ষত রয়েছে। ওর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ওসিসিতে রাখা হবে। শিশুটি সুস্থ হলে তাকে প্লাস্টিক সার্জারিসহ অন্যান্য সার্জারিও করা হবে। গঠিত মেডিকেল বোর্ডে একজন মানসিক চিকিৎসকও রাখা হয়েছে। শিশুটিকে এখন আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. খাজা আবদুল গফুর জানান, গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. ফেরদৌসি ইসলাম লিপির নেতৃত্বে নয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন ডা. আশরাফ-উল হক কাজল, ডা. আমানুর রসুল, ডা. জিল্লুর রহমান, ডা. সাঈদা আনোয়ার, ডা. মো. আবুল কালাম, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, ডা. মো. মোজাফফর হোসেন ও ডা. বিলকিস বেগম।

পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আশরাফ-উল হক কাজল বলেন, ‘ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির প্রজনন অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। শিশুটির শরীরে অস্ত্রোপচারের জন্য এক থেকে দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে তার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মানসিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলে বাড়ি ফিরতে পারবে। ভবিষ্যতে অস্ত্রোপচার করে শিশুটির প্রজনন অঙ্গকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

শিশুটির বাবা জানান, বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় তার মেয়ে। তার সন্ধানে তিনি এলাকায় মাইকিং করেন। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে ওই দিনই রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন বুধবার ভোর ৬টার দিকে তার মেয়েকে বাড়ির পাশের হলুদ খেত থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে প্রথমে ল্যাম্ব মিশনারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রংপুরে চিকিৎসাধীন শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থাভাবে শিশুটিকে তার পরিবার ঢাকায় নিতে পারেনি। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে ছয় দিন পর একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর