শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিচালকদের দুর্নীতিতে ডুবছে এনসিসি ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাল-জালিয়াতি করে ঋণ দিয়ে ডুবতে বসেছে এনসিসি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা যোগসাজশ করে শত শত কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছেন। বেনামে নিজেদের নামে ঋণ নিয়েছেন ব্যাংকটির একাধিক পরিচালক। এসব ঋণের একটি বড় অংশ এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণ গ্রাহকদের যে ঋণ দেওয়া হয়েছে সেখানে কোনো খেলাপি না থাকলেও পরিচালকদের বেনামে নেওয়া এসব ঋণের বেশির ভাগই খেলাপি। ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও বিভিন্ন কাজ নিয়ে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বও চলছে। বর্তমান পর্ষদের একাধিক পরিচালক এসব ঋণে বাধা দেওয়ায় কয়েকটি পর্ষদ সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ। জানা গেছে, এনসিসি ব্যাংকের  মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে লোন অ্যাগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিভ (এলটিআর) ঋণের নামে বিতরণ করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা, যে ঋণের পুরোটাই কোনো ধরনের মর্টগেজ ছাড়া দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির কয়েকজন পরিচালকের বেনামে নেওয়া হয়েছে এর একটি বড় অংশ, যা এখন খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক পরিচালকও এ ঋণ নিয়েছেন, যা আর ফেরত দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণ সম্পর্কে জানতে কয়েক দফা শোকজ নোটিস দিয়েছে। এর পরও ঋণের অর্থ আদায় করতে পারেনি এনসিসি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, আমদানির বিপরীতে দেওয়া প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পুরোপুরি জালিয়াতি করে দেওয়া হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এলটিআর জালিয়াতির সঙ্গে আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকের এক পরিচালকও জড়িত রয়েছেন, যিনি চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিক। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এনসিসি ব্যাংকের দুই পরিচালক প্রভাব খাটিয়ে চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ীকে ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছেন, যা কোনো কাগজপত্র ছাড়াই দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। ব্যাংকের টার্ম লোন রয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ঋণের মধ্যে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানির বিপরীতে টার্ম লোন হিসেবে ব্যাংকটি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। কোম্পানিটি মর্টগেজ হিসেবে যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় বিষয়টি ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির খেলাপির পরিমাণও বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা প্রভিশনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে গত ছয় মাসে। বর্তমানে এনসিসি ব্যাংকের প্রভিশনের পরিমাণই ৮০ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি নিয়ে দুই বছরেও তা চালু করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বারবার শোকজ নোটিস দেওয়া হলেও তারা তা চালু করেনি। এনসিসি ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালক বলেন, পুরো ব্যাংটিতে চলছে তুঘলগি কাণ্ড। যার যেমন ইচ্ছে তেমনি করে ব্যাংকের কার্যক্রম চালাচ্ছে। পরিচালকরাই ভাগ-বাটোয়ারা করে ঋণ নিচ্ছেন ও দিচ্ছেন। এখানে না আছে কোনো জবাবদিহি, না আছে সুশাসন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একাধিকবার তদন্ত করা হলেও বাস্তবে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম হাফিজ আহমেদ বলেন, ‘এলটিআর ঋণ নিয়ে আমাদের ব্যাংকের কোনো অনিয়ম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও কোনো ধরনের অভিযোগ করা হয়নি। আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রমে সব ধরনের নিয়ম পরিচালন করে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি।’

সর্বশেষ খবর