সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, নতুন প্রজন্মকে মাদক থেকে রক্ষা না করলে সব উন্নয়নই হবে নিরর্থক। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশের উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু যাদের জন্য এ উন্নয়ন সেই তরুণ প্রজন্মকে মাদকের গ্রাস থেকে রক্ষা করতে না পারলে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন দিয়েই লাভ হবে না। শামীম ওসমান গতকাল বিকালে মাসদাইর পৌর স্টেডিয়াম সংলগ্ন শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক নির্মূল এবং আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার প্রত্যয়’ শীর্ষক ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। শামীম ওসমান মাদককে নির্মূল করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এই অভিশাপ থেকে যুবশক্তিকে রক্ষা করাটা শুধু প্রশাসন আর রাজনীতিকদেরই নয়, প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকেরই নৈতিক দায়িত্ব। তিনি ঘোষণা করেন, মাদক নির্মূলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ভালো মানুষকে নিয়ে পঞ্চায়েত গঠন করা হবে। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পুনর্বাসনের মাধ্যমে দু’শ বছরের নিষিদ্ধ পল্লী যখন উচ্ছেদ সম্ভব হয়েছে, তখন মাদক নির্মূলও অবশ্যই সম্ভব হবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। শামীম ওসমান তার ভাষণের কয়েক পর্যায়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে বলেন, তার নেত্রী তাকে মৃত্যু চিন্তা না করতে বলেছেন। বলেছেন মানুষের জন্য কাজ কর। তার কাছ থেকে মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি। কারণ নেত্রী এ দেশের মানুষের মাঝেই তার হারানো বাবা-মা-ভাইদের খুঁজে পান। তাই মানুষকে খুশি করার জন্যই এখন রাজনীতি করি। কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য নয়। যতদিন বাঁচব নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যাব। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে শামীম ওসমান বলেন, রাজনীতিতে যে ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি, এরপর আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমরা একটি আধুনিক সুন্দর নারায়ণগঞ্জ গড়তে চাই। কিন্তু দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা আর অনিয়ম চাই না। আমি নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র আইভীকে বার বার বলে আসছি দলের নেতা-কর্মীদের কাছে অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চান। কারণ, তিনি আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রীকে নিয়ে কটাক্ষ সমালোচনা করেছেন, ১/১১-এর দোসরদের নিয়ে রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তিনি ক্ষমা চাননি। এত দাম্ভিকতা ভালো নয়। নেত্রীর মন সমুদ্রের মতো বিশাল, তাই তিনি মাফ করতেও পারেন। কিন্তু যারা শেখ হাসিনাকে মায়ের মতো দেখেন, সেই নেত্রীকে নিয়ে কথা বলার পর সেই কর্মীরা আইভীকে আদৌ মাফ করতে পারবেন কিনা আমার সেটা সন্দেহ আছে।
শামীম ওসমান বলেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে ত্যাগী নেতা আনোয়ার হোসেনকে দল যদি মানুষের সেবা করার সুযোগ দেয় তাহলে আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করব। সভাপতির ভাষণে আনোয়ার হোসেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে বিএনপি-জামায়াতের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, হাজার চেষ্টা করেও কখনো আইভীকে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো সভা-সমাবেশে আনতে পারিনি। বরং আমাকে ফোন করে সেই সভা বন্ধ করার হুমকি দিতেন। আমি ওনার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। এরপর তার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। আমার সহযোগিতায় উনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
আমি চেয়ার ছেড়ে দিয়েছিলাম বলেই ওনি পৌর আমলে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন।আর এখন তিনি বলেন কিনা আমি তার দয়াতেই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছি। উনি আমাকে বেইমান বলেন। আমি আঘাত পেলেও তাকে কিছুই বলব না। শুধু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ যেন তাকে হেদায়েত করেন।