শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছয় সার কারখানার পাঁচটিই বন্ধ

উৎপাদন নেই চিটাগাং ইউরিয়া, কাফকো আশুগঞ্জ, পলাশ, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায়

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ছয় সার কারখানার পাঁচটিই বন্ধ

কৃষি উৎপাদনের অন্যতম উপাদান ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাত মাস ধরে গ্যাসের অভাবে ছয়টির মধ্যে পাঁচটি সার কারখানা বন্ধ। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, কারখানা বন্ধ থাকায় তার চেয়ে অন্তত ৫ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কৃষকের চাহিদা মেটাতে ডিলার পর্যায়ে সারের বিক্রয়মূল্য স্থির রেখে টনপ্রতি অন্তত ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিসিআইসি।

১৮ অক্টোবর পাঠানো ওই চিঠিতে ইউরিয়া সারের ভর্তুকির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শিল্প, কৃষি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বিসিআইসি বলেছে, চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে সার আমদানি বাবদ সরকারকে প্রতি টনে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। বিসিআইসি উৎপাদিত সারে ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দিলে প্রতি টনে অন্তত (১২০০০-৪০০০) ৮ হাজার টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে সরকারের। এ বিষয়ে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্যাস সংকটের কারণে ছয়টির মধ্যে পাঁচটি কারখানাই বন্ধ রয়েছে এপ্রিল থেকে। আবার দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সারের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে ইউরিয়া সারের বিষয়ে আমাদের দিক থেকে দুই ধরনের প্রস্তাব রয়েছে। উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে সরকার প্রণোদনা (ভর্তুকি) দিতে পারে। অথবা কৃষক পর্যায়ে দাম বাড়ানো যেতে পারে।’ তিনি বলেন, এখন যে বাজার পরিস্থিতি ও কৃষকের সক্ষমতা— এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার সারের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ভাবতেই পারে। জানা গেছে, দেশে মোট ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় ১৯ দশমিক ১৪ লাখ টন, যা চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ। উৎপাদিত সারের বাইরে অবশিষ্ট চাহিদা মেটাতে কাফকোর মাধ্যমে কাতার, সৌদি আরব, ইউনাইটেড আরব আমিরাত (ইউএই) ও চীন থেকে আমদানি করা হয়। এ ছাড়া আমদানির বিকল্প হিসেবে দেশে সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্প (এসএফপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কারখানাটি দু-এক দিনের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা থাকলেও অন্য কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ইউরিয়া পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশের ছয়টি সরকারি ইউরিয়া সার কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ দশমিক ১৫ লাখ মেট্রিক টন হলেও প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ না করায় উৎপাদন হ্রাস পেয়ে ২০১৪ সালে ১০ লাখ টনে নেমে আসে। ২০১৫ সালে ইউরিয়া উৎপাদিত হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টন। ২০১৬ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হলেও এখন তা কমিয়ে ৭ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, গত এপ্রিল থেকে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ নেই। ফলে যমুনা সার কারখানা বাদে বাকি পাঁচটি সাত মাস ধরে বন্ধ। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব কারখানা হলো চট্টগ্রামে অবস্থিত চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও চট্টগ্রামে জয়েন ভেঞ্চারে করা কাফকো সার কারখানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা, নরসিংদীর পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা। যমুনা ইউরিয়া সার কারখানায় উৎপাদনের কাজ চলছে। আশুগঞ্জ সার কারখানায় সম্প্রতি গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। চেষ্টা করেও সেটি উৎপাদনে আনা যাচ্ছে না। অবশ্য চাহিদা মেটাতে শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্প (এসএফপি) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিসিআইসি জানিয়েছে, দু-এক দিনের মধ্যে সেটি উৎপাদনে যাবে। এর ফলে সর্বোচ্চ ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন সার উৎপাদন হতে পারে এই মৌসুমে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিসিআইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, মোট উৎপাদন কম হওয়ায় কারখানাগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সার কারখানাগুলো রাসায়নিক কারখানা হওয়ায় এবং গ্যাস সংকটের কারণে একটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় অবক্ষয়ের কারণে প্লান্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেশি হচ্ছে। বিসিআইসি আরও উল্লেখ করেছে, সরকার ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে গ্যাসের মূল্য ৪ দশমিক ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করেছে। সারের উৎপাদন খরচ বাড়াতে এও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। সিলেট অঞ্চলে সারের চাহিদা কম থাকায় নবনির্মিত শাহজালাল সার কারখানা থেকে উৎপাদিত সারের একটি বড় অংশ যাবে উত্তরবঙ্গে। সে কারণে উৎপাদিত সারের লোডিং-আনলোডিং এবং পরিবহন বাবদ টনপ্রতি প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিসিআইসি। উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষা সারের দাম কম হওয়ায় কারখানাগুলো রক্ষণাবেক্ষণেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যাচ্ছে না। সারের ভর্তুকি অথবা দাম বাড়ানোর পক্ষে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে চিঠিতে।

সর্বশেষ খবর