শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিদায় প্রস্তুতি ইসির

গোলাম রাব্বানী

নির্বাচন কমিশনে চলছে বিদায়ের প্রস্তুতি। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আছে আর মাত্র তিন মাস কয়েক দিন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। ইতিমধ্যে নিজ নিজ ফাইলপত্র গোছানো শুরু করেছেন কমিশনাররা। তবে বিগত হুদা কমিশন বিদায়ের আগে ‘ইসি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের আলাদা খসড়া’সহ নির্বাচনী আইন সংস্কারে একগুচ্ছ সুপারিশ রেখে গেলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বর্তমান ইসির। বিদায়ের আগে নতুন কমিশন গঠন বা নির্বাচনী আইন সংস্কারে তাদের কোনো প্রস্তাবনা থাকছে না। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে। আইন হলে আইন হবে; যতদিন আইন না হয় ততদিন সংবিধান অনুসারে হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে মোতাবেক হবে। এদিকে সবার চোখ এখন নির্বাচন কমিশনের দিকে। সর্বত্র আলাপ-আলোচনা চলছে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে। দ্রুত সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের বিদায়ের পর আসবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কমিশনে কারা আসছেন, কীভাবে তাদের নিয়োগ হবে, আগামী নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ হবে—তা নিয়ে সবখানেই চলছে আলাপ-আলোচনা। এমনকি ‘নবম সংসদ নির্বাচন’ বর্জনকারী দল বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি তুলেছে তারা। ইসি নিয়োগে ‘সার্চ কমিটি’ গঠনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটানোর দাবিও জানিয়েছে দলটি। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংবিধানে আইন প্রণয়নের কথা থাকলেও গত চার দশকেরও বেশি সময়ে তা আর হয়ে ওঠেনি। এ ক্ষেত্রে কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধানও রাখার প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনৈতিক মতৈক্য তৈরিতে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেই ২০১২ সালে ৫ সদস্যের বর্তমান ইসি গঠন হয়। কিন্তু ইসি নিয়োগে কোনো আইন না হলেও গেলবারের মতো দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নতুন ইসি আসছে। যাদের অধীনে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮(১)-এ বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারও আগের প্রক্রিয়ায় ইসি নিয়োগ হবে। সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ২০১২ সালে যেভাবে বর্তমান ইসি গঠন করা হয়েছিল, এবারও সেভাবেই হবে। তারা বলেছেন, সংবিধানের আলোকে ইসি নিয়োগে আইন করার পরিকল্পনা সরকারের নেই। রাষ্ট্রপতি যথাসময়ে সংবিধান অনুসারে ইসি নিয়োগ দেবেন। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নামের সুপারিশ তৈরি করতে চার সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারককে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটিতে সদস্য হন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্মকমিশন চেয়ারম্যান। এর আগে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অধিকাংশ দলই সার্চ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল। ইসি গঠন নিয়ে ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ২৩টি দলের মতামত নেন রাষ্ট্রপতি। এ সংলাপে অধিকাংশ দলই সংবিধান অনুসারে সিইসি ও ইসি নিয়োগে আলাদা আইন করা বা অনুসন্ধান কমিটির পক্ষে মত দেয়। সার্চ কমিটির আহ্বানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি কোনো নাম দেয়নি। এই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচ পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশের পর ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পরদিন প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়েই তারা যোগ দেন ইসিতে।

নির্বাচনী আইন : সংস্কার প্রস্তাব থাকছে না বিদায়ী ইসির : নির্বাচনী আইন সংস্কারে নিজেদের মেয়াদে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একগুচ্ছ মতামত সংগ্রহ করলেও বিদায়ের আগে সরকারের কাছে এ নিয়ে কোনো প্রস্তাব রাখছে না কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় ১% সমর্থন তালিকা, না ভোটের বিধান, সমভোটে প্রার্থীদের লটারি প্রথা, ৫০% ভোট না পড়াসহ অন্তত দুই ডজন বিধির বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজনসহ সংস্কার প্রস্তাবনা মাঠ কর্মকর্তারা পাঠিয়েছেন। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সংসদ নির্বাচনের জন্য ‘গণপ্রতিনিধি আদেশ’ (আরপিও)তে সংশোধনী আনার বিষয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ নেই বলে জানান একাধিক নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচনী আইনের সংস্কার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, আমাদের আর সময় রয়েছে মাত্র তিন মাস কয়েকদিন। এ সময়ে নতুন করে কোনো কাজ আর হয়তো হাতে নেওয়া সম্ভব হবে না। মাঠ কর্মকর্তাদের বেশকিছু প্রস্তাব এসেছে; আগামী ইসি চাইলে সে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাঠ কর্মকর্তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে একীভূত করার কাজটিও বেশ কষ্টসাধ্য। স্বল্প সময়ে তা আর করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এ ছাড়া ৫ সদস্যের ইসিতেও নানা বিরোধের মধে?্য ‘সংস্কার’ প্রস্তাব বিষয়ে একমত হওয়ার বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে।

নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে মত দেবে না বর্তমান ইসি :নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে গত ইসি সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখলেও বর্তমান ইসি এ ধরনের সুপারিশের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে ড. এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে সংবিধানের আলোকে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে ‘সিইসি ও ইসি নিয়োগ পদ্ধতির আইনের খসড়া’ পাঠায়। যদিও তা আর আমলে আনেনি তৎকালীন সরকার। এ অবস্থায় বিদায়ের প্রাক্কালে ‘নিয়োগ পদ্ধতি’ নিয়ে আগের ইসির মতো বর্তমান কমিশন সরকারের কাছে কোনো প্রস্তাবনা দেবে কিনা জানতে চাইলে কাজী রকিব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে। আইন হলে আইন হবে। যতদিন আইন না হয় ততদিন সংবিধান অনুসারে হচ্ছে। তিনি জানান, (সিইসি ও ইসির নিয়োগ) এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া সে মোতাবেক হবে। গতবার একটা সার্চ কমিটির মাধ্যমে এটা হয়েছে। এবার কি হয় দেখা যাক, এখনো বেশ অনেক সময় রয়েছে, বলেন সিইসি।

সর্বশেষ খবর