শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন ঢেলে সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দলকে আরও বেশি গতিশীল ও সুসংগঠিত করতে এই প্রথম চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দুটি করে বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকেরও বিভাগে রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি করে বিভাগে একজন করে প্রেসিডিয়াম সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগের একটি আলাদা অফিস নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও বিভিন্ন পেশাজীবী নির্বাচন পরিচালনার জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। জেলায় জেলায় কোন্দল মিটিয়ে নেতা-কর্মীদের এক কাতারে আনা হচ্ছে। এজন্য আগামী মাসে শুরু হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর। দলীয় সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচন জীবন-মরণের প্রশ্ন। জনগণের দোয়া, ভালোবাসা নিয়ে আওয়ামী লীগকে ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিততে হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সংগঠন। এই শক্তিকে আরও সংহত করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। আগামীতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা হবে চ্যালেঞ্জিং। সেই নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে আমাদের কিছু পলিসি থাকবে। সেগুলো বাস্তবায়ন করাই হবে আমাদের কাজ। দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আগামী নির্বাচনে উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করে অগ্নিসন্ত্রাসী, মানি লন্ডারিংকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসব ইনশা আল্লাহ।’ দলীয় সূত্রমতে, আগামী নির্বাচন দেশের সব কটি রাজনৈতিক দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎসবমুখর হবে— এমনটাই চায় আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে এমন ইঙ্গিতও এসেছে দলের পক্ষ থেকে। এমনকি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাদের। গত বুধবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন আর খুব বেশি দূরে নেই। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সবাইকে নির্বাচনে জয়ের জন্য কাজ করতে হবে। এ ছাড়া তিনি যেসব জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল রয়েছে সেগুলোর সমস্যা দ্রুত নিরসন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেন। দলীয় সূত্রমতে, দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের আগে যেসব সাংগঠনিক জেলার কমিটি গঠিত হয়েছে সেগুলোর বেশ কয়েকটিতে সমস্যা রয়েছে। কোথাও একাধিক কমিটি হয়েছে, কোথাও পুরনো নেতাদের একটি অংশকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে একপক্ষীয় কমিটি গঠিত হয়েছে, কোথাও অন্য দল থেকে আসা নেতাদের বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে তৃণমূল থেকে বহু অভিযোগ এসেছে। দলীয় সূত্রমতে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রান্ত থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে এবারই প্রথম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের পাশাপাশি দলের চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে সবকিছু মনিটরিংয়ের জন্য দুটি করে বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে যাবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তারা সফরকালে দলকে আরও বেশি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে জেলা-উপজেলা নেতাদের পরামর্শ দেবেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের নতুন দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে নেত্রীর বার্তা নিয়ে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ছুটে যাব। আগামী নির্বাচনে দলকে পুনরায় জয়ী করতে বিগত দিনে সরকারের উন্নয়ন ও আগামীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ও মিশন কী সেগুলো তুলে ধরব।’

জেলায় জেলায় জনসভা : দলকে আরও বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে এখন থেকেই জেলায় জেলায় জনসভা করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া ১৬ নভেম্বর কুষ্টিয়া, ১৯ নভেম্বর নোয়াখালী ও ২৩ নভেম্বর সিলেটে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি জেলায় এখন থেকেই জনসভার উদ্যোগ নিয়েছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সেখানে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করতে সব ধরনের দিকনির্দেশনা দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব বণ্টন : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে মাহবুব-উল আলম হানিফ, ঢাকা ও ময়মনসিংহে দীপু মনি, খুলনা ও বরিশালে আবদুর রহমান এবং রংপুর ও রাজশাহীতে জাহাঙ্গীর কবির নানককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আট সাংগঠনিক সম্পাদককে আট বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত কমিটির বিভাগে দায়িত্ব পালন করা সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে এবার ছয়জনেরই দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ পরিবর্তন হয়েছে। কমিটিতে দুই নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। গত কমিটিতে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব পালনকারী আহমদ হোসেন এবার সিলেট বিভাগে, আর সিলেট বিভাগের মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন। গত মেয়াদে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবার খুলনা বিভাগে, রংপুরের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবার রাজশাহীর দায়িত্ব পেয়েছেন। গত মেয়াদে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোজাম্মেল হক এবার রংপুর বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গতবারের মতো এবারও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে আছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

 

সর্বশেষ খবর