শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
হিন্দুদের ওপর হামলা

শাহবাগে বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহবাগে বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করেন ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে, শাহবাগ মোড় দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ছুটির দিনেও প্রেসক্লাব থেকে মত্স্য ভবন হয়ে রূপসী বাংলার মোড়, কাঁটাবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে যানজটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ বলছে, অনেক বাস নির্ধারিত রুটে যেতে না পারায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা সকালে জগন্নাথ হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যায়। সেখানে বেশ কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা ঢাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে শাহাবাগে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে কয়েকশ প্রতিবাদকারী শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ চলাকালে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদকারীরা। তারা ছায়েদুল হককে দল ও মন্ত্রীর পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। প্রতিবাদকারীরা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু তদন্ত, আক্রান্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। প্রতিবাদকারীরা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি মানা না হলে কঠিন কর্মসূচি দেয়া হবে। ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থী, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, জাগো হিন্দু বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘ, সচেতন হিন্দু শিক্ষার্থীরা, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। সংগঠনগুলোর সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী মানিক রক্ষিত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সনাতন ধর্মের মানুষদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। এখনো সনাতন ধর্মের মানুষের ওপর নির্যাতন চলছে, এটা দুঃখজনক। তিনি জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন। তা না হলে ১৫ নভেম্বর সারাদেশে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট পালিত হবে। সন্ধ্যায় এক হাজার মোমবাতি প্রজ্বলন করে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরের প্রায় ১৫টি মন্দির ও শতাধিক হিন্দুবাড়িতে হামলা হয়। এর পাঁচ দিন পর উপজেলা সদরে হিন্দু সমপ্রদায়ের পাঁচটি ঘর ও একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

হামলাকারীদের আইনি সহায়তা না দেয়ার ঘোষণা আইনজীবীদের : এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, নাসিরনগরে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলায় জড়িতদের কোন ধরনের আইনি সহায়তা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইনজীবীরা। গতকাল দুপুরে নাসিরনগরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীরা এমন ঘোষণা দেন। এ সময় সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে প্রায় দেড় শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের আইনি সহায়তার ঘোষণা দিয়ে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। মাহবুব উদ্দিন খোকন এ ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করতে সব মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স ম রেজাউল করীম বলেন, নাসিরনগরের ঘটনায় আইনি সহায়তা প্রদানে বাধা দেয়ার কথা শুনেছি। যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারের কেউ বাধা দিয়ে থাকে সেই ঘটনারও তদন্ত করা হবে। এ সময় সুপ্রিমকোর্ট  বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবি সমিতির সভাপতি সারোয়ার-ই-আলম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম তপনসহ প্রায় দেড় শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর