রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বোতভাবে নিরাপত্তা দিতে হবে। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি দেশের সব জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে। গতকাল বিকালে গণভবনে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার জনগণের সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন এক নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। তা হলো ধর্মের নামে মানুষ হত্যা। ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই ইসলামের কথা। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইসলামের পথ না। কাজেই আমি চাইব, দেশের প্রত্যেকটি মসজিদে ইমাম সাহেবরা জুমার নামাজের আগে খুত্বায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নবী (সা.) কী বলে গেছেন, কোরআন শরিফে কী আছে, ইসলাম ধর্ম কী বলে, এ বিষয়গুলো মানুষকে আরও ভালোভাবে জানাবেন। যাতে কেউ এ ধরনের আত্মঘাতী পথে পা না বাড়ায়।

ভিডিও কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ। এ কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভাগের আট জেলার অন্তত ২ হাজার ৯৮১টি স্থানে জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ হয়। সেসব সমাবেশে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনেন তারা। এ সময় নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাটের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, এখন একটা শ্রেণি হয়েছে, তারা একদিকে ইসলামের নাম নিচ্ছে, আরেকদিকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ চালাচ্ছে। আমাদের সরকার এই ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসকে আমরা কোনোদিন প্রশ্রয় দেব না। এ দেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা বাস্তবতা। আমি আগে যে বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি, সেখানেও বলেছি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আপনাদেরও বলছি, জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসের ঠাঁই হবে না। বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত দেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। রাজশাহী অঞ্চলে বাংলাভাই সৃষ্টি করেছিল। তাদের আমলেই দেশবাসী দেখেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা কীভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়েছে। তারা ২০১৪ সালের আগে ও পরে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। আমরা তখন দেশবাসীর সহায়তা চেয়েছিলাম। আপনারা সম্মিলিতভাবে এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করেছিলেন। এখন আহ্বান জানাই, আসুন সবাই মিলে সম্বলিতভাবে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। যাতে করে ওই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সাড়া না পায়। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেকের ওপর নজর রাখুন, সহযোগিতা করুন। কেউ বিপথে যায় কিনা খেয়াল রাখবেন। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কাউকে বিপথে যেতে দেওয়া হবে না।

বিএনপির এক নেতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এক নেতা বলেছেন, তারা নাকি আন্দোলনের তীর দেখিয়েছেন, নভেম্বরে আন্দোলন দেখাবেন। জনগণ অতীতেও জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, এবারও রুখে দাঁড়াবে। আন্দোলনের নামে মানুষ খুন ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোদিন জনসমর্থন পাবে না।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা আগেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, গৃহহারা ও হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করতে। এখন যদি কোনো কুঁড়ে ঘরের মানুষের খবর পাওয়া যায়, আমাদের জানাবেন, দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেককে ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে শিল্পকলকারখানা স্থাপন করুন। তবে পরিবেশ যেন বজায় থাকে, সেজন্য পুকুর, ডোবা নালা রাখতে হবে। গাছ লাগাতে হবে।

সর্বশেষ খবর